স্মরণে হুমায়ূন আহমেদ

Nov 12, 2024 - 18:58
Nov 21, 2024 - 21:46
 1  31
স্মরণে হুমায়ূন আহমেদ
Graphics by Farhana Parvin Shemu

অতি সাধারণ বস্তুকে অসাধারণভাবে ব্যক্ত করার এবং পাঠকের কাছে নিজের লেখা জীবন্ত তুলে  ধরার ক্ষমতা নিয়ে যিনি জন্ম গ্রহণ করেছিলেন, তিনি নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ। তিনি একাধারে একজন অধ্যাপক, সাহিত্যি্‌ কবি, নির্মাতা ও একজন দার্শনিক ও বটে। তিনি জীবনকে এক  ভিন্নধারায় দেখতে পেতেন। আমাদের সবার প্রিয় এই সাহিত্যিক সম্পর্কে প্রায় সবকিছুই আমাদের জানা,  তার সম্পর্কে কোন তথ্য উপস্থাপন করা অনেকটা সূর্যকে বাতি দেখানোর মতোই নিরর্থক।  তবুও নিজের এই প্রিয় লেখকের জন্মদিনে তার সম্পর্কে কিছু লেখার অভিপ্রায় সংবরণ করতে পারছি না।

 আমার কাছে মনে হয়, হুমায়ূন আহমেদের লেখনিতে এক ধরনের মোহ ছিল। পাঠক মন্ত্রমুগ্ধের মতো বই পড়ে শেষ না করা পর্যন্ত তার উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মাঝে আচ্ছন্ন হয়ে থাকতো। কলেজে পড়া অবস্থায় ক্লাসের পিছনে বসে তার গল্পের বই পড়তাম। তার লেখাকে অনেকে অনেক বড় বড় কবি সাহিত্যিকরা সমালোচনা করেছেন, এমনকি সাহিত্যের মূল রসদ এর অপূর্ণতা বলে বিদ্রুপ করেছেন, কিন্তু আমার কাছে তার লেখার সাধারণ অবয়বটাই সবচাইতে বেশি আকর্ষণ করেছে। তার লেখা সবগুলো বই আমি বহুবার পড়েছি, কিছু কিছু বই দশ বারেরও বেশি পড়েছি। তার তৈরি করা চরিত্র হিমু পড়লে নিজেকে রূপার মনে হতো, মনে হত এ পৃথিবীর সব আকাঙ্ক্ষাই তুচ্ছ,  আবার তার জোছনা ও প্রকৃতির বর্ণনা শুনে যাযাবর হয়ে যেতে ইচ্ছে করতো। কত অবেগেরই না  খেলা  করেছে তার লেখা আমার মনে। তার লেখায় অতি সাধারণ মানুষের কথা থাকত, ছিল সরল সাধারন জীবন যাপনের আহ্বান , ছিল দেশপ্রেম, স্বার্থহীন  ভাবে জীবন যাপনের অভিলাষ, অন্যায়ের প্রতি সরল প্রতিবাদ, প্রকৃতির মুগ্ধতা,  জোছনার ও বৃষ্টির অপরূপ বিবরণ। তার মিসির আলির পর্ব গুলো  পড়লে মনে অজান্তেই সবার চারপাশ পর্যবেক্ষণ করার একটা অভ্যাস তৈরি হয়ে যেত। তার তৈরি কল্পকাহিনী ও সিনেমা দীর্ঘকাল পর বাংলার মানুষকে হলমুখী করেছিল। তার প্রতিটা গল্প প্রতিটা কাহিনী যেভাবে মানুষকে আচ্ছন্ন করে রাখতে পারে,  বড় বড় পন্ডিত বর্গের  বই দ্বারা তা কখনো তৈরি হয় নি । নব্বই দশকের যে সময় প্রথিতযশা গল্প উপন্যাস বলতেই কিছু কলকাতার বাঙালি লেখক এর গল্প উপন্যাস এর নাম উঠে আসতো এবং শীর্ষ লেখকদের উদাহরণ হিসেবে আমরা ভিনদেশী লেখক  উপন্যাসিকের নাম তুলে ধরতাম, হুমায়ূন আহমেদের লেখা  সে সময় অসীম এক পালাবদল করে তাদের মাঝে নিজের জায়গা করে নিয়েছিল। 


ছোটবেলায় তার নাটকগুলো দেখার জন্য মানুষদের যেভাবে টিভির সামনে প্রতীক্ষমান দেখেছি, তার নিজের আলাদা মাদকতা আছে। সে দৃশ্য নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়।  ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘এসব দিন রাত্রি’, ‘আজ রবি বার’ এর মত নাটকগুলো মানুষকে আবেগ তাড়িত করে অশ্রু সিক্ত করেছে বারবার, তেমনি হাসির খোঁড়াকও জুগিয়েছে । সাহিত্য জগতে অসামান্য অবদান রাখার জন্য সমগ্র বাংলা ও বাংলার মানুষ তার প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলার মাটিতে এমন পরশ পাথর হয়তো আর একটিও নেই।  আমাদের প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ তার লেখার মধ্যে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে আজীবন।  প্রিয় সাহিত্যিক আপনার জন্মদিনে আপনাকে  শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। 


Farhana Parvin Farhana Parvin is a Teacher of APBN Public School & College, Bogura. (ICT), Master Trainer of Digital Technology. Belong Science background, Also trained as a Graphics Designer as well.