গল্প- সর্ব মতে চূড়ান্ত
জংগলের সিংহ রাজা রাহাম ও তার রাজ্য চালনার কৌশল সংক্রান্ত গল্প
এক বনে রাহাম নামে এক বুদ্ধিমান সিংহ রাজা বসবাস করত। তার সুবিশাল সম্রাজ্যে সকলে সুখী মনেই ছিল। উত্তম ভাবে রাজ্য পরিচালনার জন্য রাহাম পুরো রাজ্যকে উত্তর ও দক্ষিণ এই দুই রাজ্যে ভাগ করার সিধান্ত নেন, দক্ষিণ রাজ্য পরিচালনার জন্য সেই রাজ্যের এর দক্ষ বাঘকে মেয়র হিসেবে নিযুক্ত করলেন কিন্তু উত্তর রাজ্যে কোন বাঘ না থাকায় শিয়াল মসাইকে সেই রাজ্যের মেয়র নিযুক্ত করা হল । রাজা রাহাম নিয়মিত উত্তর ও দক্ষিণ উভয় রাজ্যে মাসিক সভার আয়োজন করতেন ও প্রজাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতেন। রাহামের নীতি ছিল তিনি সবধরনের সিধান্ত গ্রহনের পূর্বে উপস্থিত প্রজাদের সকলকে হাত তুলে গৃহীত সিধান্তের প্রতি সম্মতি জানাতে বলতেন, হাত তোলার মাত্রা সংখ্যাগরিস্ট হলেই কেবল সিধান্ত চূড়ান্ত করা হত এবং সেই রায় ঘোষণার সময় তিনি কাঠের হাতুড়ি ঠুকে বিচারকের মত বলতেন –“ রায় সর্ব মতে চূড়ান্ত”।
এভাবে কিছুদিন চলার পর জঙ্গলের উত্তর অংশ থেকে রাহামের কাছে শিয়ালের নামে বিভিন্ন বৈষম্য ও অবিচারের খবর আসতে লাগল। সেখানকার প্রজাদের মধ্যে নৈরাজ্য দেখা দিল। রাহামও লক্ষ্য করলেন সেখানকার বিভিন্ন মাসিক সভায় উত্তর রাজ্যের প্রাণীগুলো কেমন নিশ্চুপ। সে ক্ষেত্রে রাহাম পরের সভায় উত্তর রাজ্যের প্রজাদের উদ্দেশে মেয়র পরিবর্তন প্রসঙ্গে মতামত জানতে চাইলেন এবং এর পক্ষপাতি কে কে হাত তুলে মতামত জানতে বললেন, কিন্তু কেউই হাত তুলছিল না। সবাইকে নিশ্চূপ দেখে শেষমেশ রাহাম জিজ্ঞেস করলেন কারো কোন অভিযোগ আছে কি না? আশ্চর্যের বিষয়, এবারও কেউ হাত তুলল না, তখন রাজা কিছুটা বিস্মিত ও নিরুপায় হয়ে শিয়ালের বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নিতে পারলেন না।
প্রাসাদে ফিরে এসে রাজা কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলেন না,তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে প্রজারা ভাল নেই। তার মনে বিভিন্ন সংশয় দেখা দিল, কি করা যায় সে বিষয়ে ভাবতে লাগলেন। রাহাম গুপ্তচর পায়রাকে উত্তর রাজ্যের নৈরাজ্যর কারণ উদ্ঘাটনের নির্দেশ দিলেন । পায়রার এসে যা যা বলল, সে সব শুনে রাহাম পুরোই হতবাক। শিয়াল উত্তর রাজ্যের মেয়র হওয়ার পর থেকেই সেখানকার প্রজাদের সম্পদ কেড়ে নিচ্ছে, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মারপিঠ সহ নানা অত্যাচার করছে, এমনকি রাজার সালিশে হাত মত প্রকাশের জন্য হাত তুললে গন হত্যার হুমকি দিয়েছে। তাই প্রাণ হারানোর ভয়ে ভীত হয়ে সভায় কেউই আর হাত তুলছে না।
পরবর্তী উত্তর রাজ্যের সভায় রাজা রাহাম সকলের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করে সরাসরি গুপচরের তথ্যর প্রেক্ষিতে শিয়ালের বিরুদ্ধে প্রতারনা ও দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ আনলেন। রাহামের প্রশ্নে সভার কেউ হাত তুলবে না এ কথা ভেবে শিয়াল মনে মনে অনেকটাই নিশ্চিন্ত ছিল। রাহামও জানতেন শিয়ালের দোষের কথা কেউ বলবে না, তাই উনি বুদ্ধি এঁটে প্রশ্ন ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। রাহাম বললেন উপস্থিত সভার সকলের কে কে শিয়ালকে নির্দোষ মনে কর? হাত তোল, কোন হাত উঠল না। রাহাম আবারও জিজ্ঞাসা করলেন কে কে শিয়ালকে মেয়র পদে বহাল রাখার পক্ষে? হাত তোল। এবারও কেউ হাত তুলল না। ভয়ে শিয়ালের চেহারা পাংশু বর্ণ ধারন করল, প্রজারা সবাই খুশিতে নড়েচড়ে উঠল। রাহাম শিয়ালকে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করে তাৎক্ষনিক ভাবে কারাবন্দী করার আদেশ দিলেন এবং বুদ্ধিমান বিচারকের ন্যায় কাঠের হাতুড়ি ঠুকে বল্লেলন - “রায় সর্বমতে চূড়ান্ত” ।