সজীব শিক্ষা গ্রহণ ও সংস্কৃতি চর্চা

Nov 15, 2024 - 00:28
Nov 12, 2024 - 18:59
 0  27
সজীব শিক্ষা গ্রহণ ও সংস্কৃতি চর্চা
Artist- Saiqa , class-6, Sec-Kanchan, APBnPSC
সজীব শিক্ষা গ্রহণ ও সংস্কৃতি চর্চা

শিশু শিক্ষার বিকাশ সম্পর্কে কবি গুরু বলেছেন- “শিশুবয়সে নির্জীব শিক্ষার মতো ভয়ংকর ভার আর কিছুই নাই; তাহা মনকে যতটা দেয় তাহার চেয়ে পিষিয়া বাহির করে অনেক বেশি।“- এই নির্জীব শিক্ষাকে সজীব করতে বিশ্ব কবি প্রকৃতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ সংস্কৃতি চর্চার প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করতেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিক শারীরিক বিকাশে যে সকল সহায়ক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় সাধারণভাবে সেগুলোই হচ্ছে সহ-শিক্ষা কার্যক্রম। এটি হতে পারে সাহিত্যচর্চা খেলাধুলা, গান, নাচ, স্কাউট, বিএনসিসি, আবৃত্তি, ছবি আঁকা, নাটক ইত্যাদি। সকল সহ শিক্ষা কার্যক্রম শিশুদের যেমন মানসিক বিকাশে সহায়ক তেমনি বুদ্ধিমতার প্রস্ফুটন ঘটায়। বিদ্যালয়ে দলীয়ভাবে সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ তাদের  মানসিক ভাবে প্রফুল্ল করে, প্রকৃত সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে এবং তার পাশাপাশি তাদের সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে তৈরি করে। তারা নিজের দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখে, নিজেদের প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে অবগত হয়। আর তাই

শিক্ষা গ্রহনের পাশাপাশি সকল কার্যক্রমের অংশগ্রহণের পরিবেশ তৈরি করে দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি বিদ্যালয় প্রধানের সুদৃষ্টি থাকাটা খুবই জরুরী। বর্তমান সময়ে একান্নবর্তি পরিবারের বেড়ে ওঠার কারনে শিশুরা তাদের পরিমিত ভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হয়। শহুরে পরিবেশে খেলার মাঠেরও অপ্রতুলতা রয়েছে,  ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীদের  দিনদিন মোবাইল গেম সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোর প্রতি আসক্তি ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।  সকল ঘাটতি পূরণে বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মনোনিবেশ একটি মুখ্য অগ্রগণ্য  ভূমিকা রাখতে পারে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ তাদের যেমন মেধা বিকাশের সহায়তা করে তেমনি তাদের বয়ঃসন্ধি কালীন নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখে উপরন্তু  বিভিন্ন পরিবেশর শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের একত্রে কাজ করা তাদের অভিযোজন ক্ষমতাও ত্বরান্বিত করবে , কর্মক্ষেত্রে  নিজেদের অধিক যোগ্য সুচারু রূপে প্রমাণ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

 

 সরকার শিক্ষার্থীদের সকল গুনাবলী কে ত্বরান্বিত করার জন্য বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপন সহ তাদের প্রতিভা বয়স ভেদে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। কুইজ, ভিডিও চিত্র নির্মাণ, বিভিন্ন অলিম্পিয়াড, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ইত্যাদি আয়োজন করে থাকে। কন্তু হতাশার বিষয় হচ্ছে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতি চর্চার সংক্রান্ত কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। নেই সংস্কৃতি চর্চার শিক্ষক এর পেছনে বিদ্যালয় আর্থিক সমস্যা জনবলের ঘাটতি সহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে। আমাদের দেশে  অধিকাংশ বিদ্যালযয়ে শরীরচর্চা বিষয়ক শিক্ষক থাকলেও তাদেরকে ক্লাসে অন্যান্য সাধারণ বিষয় শিক্ষকের ন্যায় পাঠদান সহ শ্রেণি কাজে ব্যস্ত রাখা হয়। সকল ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান অভিভাবকদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। গতানুগতিক স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের বাহিরে অসাধারণ কোন কিছু চাইলে, আমাদের চিন্তা চেতনারও পরিবর্তন করতে হবে। কোন শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রম অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে শিক্ষা অর্জন হয় তা কোন শ্রেণীর কার্যক্রমের মাধ্যমে কখনোই সম্ভব নয়।

স্যাটেলাইট চ্যানল এবং প্রযুক্তির অধিপত্য কারণে দুর্নীতি, অপসংস্কৃতি   বিদেশ প্রীতি তরুন্দের মধ্যে একটি সংক্রামক রোগের অবয়ব ধারণ করেছে শিক্ষার্থীদের এসকল সহ শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ হতে পারে এর অব্যার্থ প্রতিষেধক,  হতে পারে তাদের কৈশোর কালীন হতাশার প্রতিরোধক। সেচ্চাসেবা মূলক কাজে কিশোর-তরুনদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা সমাজে বৃহত্তর কল্যান নিয়ে আসবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ  অবদান রেখেছে এমন ব্যাক্তিত্বদের স্মৃতিচারণ, তাদের জীবনী নিয়ে সাহিত্য রচনা বা নাটক তৈরি, দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্ক, নিবন্ধন তৈরি, কবিতা ইত্যাদি শিশুদের নিজেদের দেশের বর্তমান প্ররিস্থিতি নিজেদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। ছারাও রয়েছে বিভিন্ন রক্তদান কর্মসূচি, বৃক্ষরোপ সহ সমাজ কল্যাণমূলক , স্বেচ্ছাসেবামূলক করমকান্দ এসব কাজে শিক্ষার্থীদের নিযুক্ত রাখতে হবে, এর মাধ্যমে তারা সমাজের প্রতি নিজেদের দায়বদ্ধতার জায়গাটা বুঝতে পারবে, নিজেদের দেশ সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের বর্তমান প্রজন্মের। পড়াশোনার উদ্দেশ্য শিক্ষা অর্জন করা হলেও, কেবল পুথিগত শিক্ষা পর্যাপ্ত নয়। সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চা শিক্ষার্থীদের মেধা মানসিক উভয় বিকাশে সব ধরনের সুষম পুষ্টি প্রদান করে, একটি রাষ্ট্রর বিবেকবান নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অনবদ্য ভূমিকা রাখবে। কেবল এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের এই বাংলা হয়ে উঠবে সবার সপ্নের সোনার বাংলা।

 


Farhana Parvin Farhana Parvin is a Teacher of APBN Public School & College, Bogura. (ICT), Master Trainer of Digital Technology. Belong Science background, Also trained as a Graphics Designer as well.