পাটের আবিস্কার- সোনালী ব্যাগ

Sep 25, 2024 - 03:48
Sep 26, 2024 - 18:09
 0  28
পাটের আবিস্কার- সোনালী ব্যাগ
internet

আমাদের জ্ঞানগর্ভ নিরীক্ষণের জন্য পাঠ সম্পর্কে যদি আমাদের কাছে কেউ তথ্য জানতে চায়, উত্তর হবে পাট আমাদের সোনালী আঁশ প্রধান অর্থকরী ফসলের একটি পাট দ্বারা দড়ি, চট, বস্তা, কারু শিল্প ইত্যাদি তৈরি করা  যায়। -এর- বাহিরে খুব একটা বেশী তথ্য দেয়া  আমাদের কারোর পক্ষেই সম্ভব হবে না।  পাটের কদর বলতে ছোটবেলায় স্কুলে পাট সম্পর্কে রচনার বাহিরে বোধহয় আমাদের আর কোন চর্চা নেই।  অথচ বিশ্বে কেবল বাংলাদেশে একমাত্র দেশ যেখানে  পাট সম্পর্কিত সম্পূর্ণ  আলাদা একটি মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।  এবং বাংলাদেশের মাটি আবহাওয়া পাট চাষের জন্য সর্ব উৎকৃষ্ট। কিন্তু  দেশের ভাগ্যের পরিহাস বলতে হবে যে পাট নিয়ে আলোচনা গবেষণা বা পড়াশোনা করার মতো কোনো সুবিধা বা ব্যবস্থায়াই আমাদের দেশে নেই।  তাই অবহেলায় অযতনে এই সোনালি আঁশের পর্যাপ্ত উপকারী ভূমিকা হতে বাংলাদেশ বঞ্চিতই বলা চলে।   

 জুটম্যান খ্যাত বিজ্ঞানী মোবারক আহমেদ খান উম্মোচিত করেছেন পাটির বিপুল সম্ভাবনা এবং তার আবিষ্কার বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশকে করেছে অলংকৃত । কেবল আর্থিক প্রাপ্তি নয় পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রেও এটি  আবির্ভাব হতে পারে একটি আশীর্বাদ হিসেবে।  পাট থেকে সাধারণত তিন ধরনের উপাদান পাওয়া যায়- সেলুলোজ, হোমো সেলুলোজ  লিগনিন। এগুলো প্রক্রিয়াকরণ করে আমরা  প্লাস্টিকের বিকল্প যে কোন পণ্য  তৈরি করতে পারি।  এমনকি এর কম্পোজিট কাঠের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যবহার করা যেতে পারে গ্লাস ফাইবারের বিকল্প হিসেবেও। পাটের তৈরি সোনালী ব্যাগ সম্পূর্ণ পলিথিন ব্যাগের মতো দেখতে হলেও এটা সমপরিমাণ পলিথিন ব্যাগের তুলনায় অধিক পরিমাণ ওজন তুলতে সক্ষম এবং এই পলিথিন ব্যাগ সম্পূর্ণরূপে বায়োডিগ্রেবল এবং সাসটেইনেবল। অর্থাৎ এটি ব্যবহারের  পর ফেলে দিলে এটি মাটিতে মিশে গিয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করবে, পানিতে ফেলে দিলে গলে গিয়ে মাছের খাদ্যে পরিণত হবে।  প্লাস্টিক উৎপাদনে যেমন বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয় বাতাসে মিশে যেয়ে পরিবেশের ক্ষতি করে, সেখানে এক হেক্টর জমিতে পাট চাষ করলে সেটা ১২ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নিয়ে পক্ষান্তরে  ১০ টন অক্সিজেন  প্রদান করে। এভাবে পার্ট অর্থ উপার্জন পরিবেশ রক্ষা- উভয় ক্ষেত্রে অতুলনীয় অবদান রাখতে সক্ষম। 

 বংলদেশে প্রতি মাসে কেবল ঢাকায় কোটি ১০ লক্ষ পলিব্যাগ ব্যবহার করা হয়এবং বৃষ্টির সময় এগুলো বিভিন্ন ড্রেনে গিয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি করে এবং পরিবেশ দূষণের সাথে সাথে মাটি দূষণ, পানি দূষণ, বায়ু দূষণ ছারাও বিভিন্নভাবে পরিবেশের ক্ষতি করে থাকে। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক গাছ যেখানে ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সে গড়ে ৩০ ভাগ সেলুলোজ প্রদান করে, সেখানে পাঠের সময় লাগে মাত্র ১০০ থেকে ১২০ দিন মধ্যে পরিপক্ক হয়ে আমাদের ব্যবহার উপযোগী সেলুলোজ ফাইবার দিতে সক্ষম। । এবং এর মধ্যে সেলুলজের পরিমাণ গড়ে ৭০% এর বেশী।  এর কম্পোজিট আমরা কাঠের মত ঘড়ের বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরিতেও ব্যবহার করতে পারি।  সেদিক বিবেচনায় এটি বৃক্ষ নিধনেও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম।  

 এত সব গুণের অধিকারী হওয়া সত্বেও বাংলাদেশ অমূল্য আবিষ্কারের মূল্যায়ন কেবল একটি পুরস্কার প্রদান পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর বানিজ্যিকি করণ, উৎপাদন এবং ব্যবহার বা প্রচার প্রচারণায় নেয়া হয়নি উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ। অতি সাম্প্রতিক বর্তমান মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা বিষয়টির প্রতি সুদৃষ্টি অর্পণ করেছেন । আশা করা যায় যে পাটের তৈরি এই সোনালী ব্যাগ বিশ্বের দরবারে আমাদের দেশের সুখ্যাতি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি মুখ্য উপকরণ হিসেবে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি পাবে।

Files


Farhana Parvin Farhana Parvin is a Teacher of APBN Public School & College, Bogura. (ICT), Master Trainer of Digital Technology. Belong Science background, Also trained as a Graphics Designer as well.