ত্রিবর্ণী স্বপ্নের বুনন

Jan 2, 2025 - 17:00
Jan 3, 2025 - 18:24
 0  4
ত্রিবর্ণী স্বপ্নের বুনন
ছবি এডিটঃ সম্পা রানী সরকার

দুর্গাদহ হাট।একটা ডিম পাড়া হাঁস নাদুস-নুদুস।শামুক আবাস আর বিলের শ্যাওলা জলে উচ্ছ্বলা। তার ডিম জমিয়ে মোসলমান বাড়ি, অথবা স্থানীয় দোকানে বেচে ধুপি সাবান অথবা নুন,তেল কিনে হরেনের স্ত্রী। অভাবের সংসারে তাদের বড় দায় নাতনি মালতি।অকাল প্রসবে মারা যায় হরেনের বালিকা মেয়ে।সেই থেকে মা-হারা মালতিকে বুকে পিঠে করে মানুষ করে হরেন ও তার স্ত্রী।গ্রামের বুলু স্যার বলেছেন মেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে হবে। স্কুলে ভর্তি করাতে হবে। স্বর্ণহাঁসিনীকে বুকের সাথে চেপে ধরে নানার সাথে হাটে যায় মালতিও। দুশ টাকায় হাঁস বেচা টাকা দিয়ে কিনে তিনরঙা প্রিন্টের কাপড়।লাল,হলুদ,কমলা মিশ্রণের কাপড়ের লাল রঙটি চকচকে স্বপ্ন জাগায় শিশু মালতির মনে। নতুন ফ্রক পড়ে স্কুলে যাবে।বড় দিদিমণি হবে।

শামুকগন্ধা আঁশটে জীবনে নানীর মত পানিপোকার কামড় খেয়ে ধান রোপণ,কিংবা রক্তচোষা জোঁক শরীরে ধরেও শস্য নিড়ানীর কাজ সে করতে চায়না।বড় দিদিমণি হয়ে সে নানা-নানীকে অনেক চাল কিনে দিবে। হাঁড়ি ভরা ভাত থাকবে। তাহলে শীতের ঠান্ডা জলে মাছ, কাঁকড়া, শামুক খুঁজতে হবে না। করতে হবে না বাবুদের জমিতে হাড়ভাঙা খাটুনি।খুশি তার মন উপচে মিশে গোধূলি রঙে।

হরেন সাথে চোপড়া, পুঁটি,কই,টাকি প্রভৃতি মাছও হাটে এনেছে।সব বেচা হয় নি। পাড়ার  বড় ভাই ঝন্টুর সাথে দেখা হলে মালতিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। দুই পাশের ইউক্যালিপটাস, শিশু, মেহগনি গাছের সবুজ ছায়াঢাকা দিঘল দিঘিটাও ছোট্ট মালতির স্বপ্নের মত দীর্ঘ।জমি,ঘাস, রাস্তা, ফিকে সন্ধ্যার আলো আঁধারীতে মালতি হাঁটে।ছোট্ট চপল পায়ের আনন্দ পদধ্বনি পথের নিরবতা ভাঙে। শুনশান শূন্যতায় হরেনও বাড়িতে ফেরে।

অথচ মালতি পড়ে থাকে কুশার জমিতে। বয়সী মাতাল ঝন্টু নিখোঁজ।সদ্য কেনা রঙিন কাপড়টিতে দলা রক্তের ত্রিবর্ণী স্বপ্নের বুনন...আর রাতের নিস্তব্ধতার মত ক্রমশ ভারি হয় আদিবাসী পল্লি….