জলের নষ্টালজিয়া

Dec 26, 2024 - 18:25
Dec 26, 2024 - 19:03
 0  11
জলের নষ্টালজিয়া
ছবি এডিটঃ সম্পা রানী সরকার

ঝমঝমে বৃষ্টি, পুকুর,বিল, মাঠে মুক্তো দানার মত অবিরত ঝরছে।তখন খলসে-পুঁটির আবেগকথন আর ট্যাংরা-টাকির নাচানাচি দেখতে মেঠো ভেজাপথে বেখেয়ালে ছোটে নিঝুম।বৃষ্টিধৌত কিশোরীর মনচপল উষ্ণতার সাথে শ্বেতহরিৎ কদমমেয়ের স্নিগ্ধ হাসি আর বিস্তীর্ণা মাঠের অশেষ সবুজের এক অপরূপ মোহক্ষণে নিঝুম উদ্দাম, বাঁধাহীন। হাঁটছে।

পেছনে ছোটে আরও একজন।জন্মকাল থেকেই বৃষ্টি বৈরিতা যার শত প্রজন্ম ধরেই,সেও কিনা যৌবনের দুরন্তপনায় উচ্ছ্বল, বেসামাল ছুটে চলে বৈরিলগ্নের স্বাদ নিতে। দুর্দান্ত রসিক! বিলাসী! সমগোত্রীয়দের সাথে তার তেমন সখ্য না থাকলেও পাশের বাড়ির চন্দ্রমুখীকে তার মনে ধরেছে।আজ যদি সেও বাইরের পৃথিবীর টানে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসত তবে প্রকৃতির আপন রহস্যজালে হৃদয় দেওয়া-নেওয়ার এক পশলা আনন্দ অশ্রু বিশাল জলরাশিতে যোগ হত। কিন্তু সে বড়ই বেরসিক!দু এক ফোঁটা বৃষ্টিজল গায়ে পড়তেই এলার্জি অনুভবের মত ছুটে যায় গুমোট অন্ধকারে প্রসাবগন্ধি স্যাঁতস্যাঁতে সেই চির আবাসে।যে অবলা স্বেচ্ছাবন্দি জীবন মেনে সুখী,মুক্তির আকাঙ্ক্ষা তার অজানা!

কিন্তু প্রকৃতির রহস্যময়ী রূপ সেই রসিক জনকে জাগায় অবাধ্য কিশোরের মত।তাই পুকুর জলে স্নান কিংবা রৌদ্রস্নানে সে জীবন উপভোগ করে।

এই তো সেদিন। হাড্ডিসার মা দুই ভাই-বোনকে জন্ম দিয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই মারা গেল। অপুষ্টিতে বোনটিও চলে গেল।তখন বাড়ির বড় মেয়ে নিঝুম তাকে আদরে, শাসনে আপন করল।ভাত,রুটি,মাছ,মাংস,পরাটা, মিষ্টি, সবজি সব খাবারে অভ্যাস করালো। জীবনটাকে রঙিন করলো।এখন সে তরতাজা, সুঠামদেহী। সারাক্ষণ অস্থির চঞ্চলতা আর খুনসুটিতে পুরো বাড়ি মুখর রাখে।নিঝুম যখন কলেজ হোস্টেলে চলে যায়,তখন সে অনেকটা বেপরোয়া হয়।নিয়ম ভেঙে অনিয়ম করে। প্রতিবেশীর অনিষ্ট করে।বাড়ি থেকে প্রায় ভুল দিকে ছুটে যায়।

একদিন দড়ি বেঁধে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়.. পেছনে রেখে যায় করুণ আর্তচিৎকার। সামনে রাস্তায় ভ্যান দাঁড়িয়ে, অদূরে হাটে কসাইছুরির শানরঙা ঝলক.. তাকে যেতেই হয়।সে হুতুম! মানুষ নয় ! ছাগল!