চোর

Jun 4, 2024 - 19:00
Jun 9, 2024 - 14:48
 2  26
চোর

এ বছর বৈশাখের শুরুতে প্রকৃতি তার রুক্ষতা মেলে ধরেছে। কদিন ধরে কালু তস্করের দিনকাল ভাল যাচ্ছেনা। রাতে গরম, ঘুমানো দায়। এর মধ্যে রাতে চুরি করা কালু তস্করের জন্য বিপদজনকও বটে। সেদিন পুব পাড়ার হোসেন মিয়ার খোয়ারে হানা দিতে গিয়ে হাতে প্রাণ নিয়ে বেঁচে ফিরেছে কালু। সে রাতে কালু হোসেন মিয়ার বাড়িতে নিঃশব্দে ঢুকে। তারপর খোয়ারের দরজাটা খুলে বোতলে রাখা পানি মুরগির গায়ে ছিটাতে থাকে এবং অতি সাবধানে মুরগিগুলো বস্তা বন্দি করে। কাজটা এ পর্যন্ত সফলভাবে করলেও বাধ সাধে খোয়ারে থাকা কুঁচে মুরগিটা। তার ওস্তাদ ভানু তসকর এ বিষয়ে আগেই সতর্ক করে বলেছিল কুঁচে মুরগি থেকে সাবধান, একটু ভুল করলে গৃহস্থ জেগে যাবে। কালুর ক্ষেত্রেও ঘটলো তাই কুঁচে মুরগি ধরতে গেলে মুরগিটা শব্দ করে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে হোসেন মিয়া জেগে ওঠে। চোর চোর চোর …. হাওয়ায় আগুন ছড়ানোর মত পুরো পাড়ায় রব ওঠে চোর চোর চোর ….। কালুর মুরগির খোয়ার থেকে বেরিয়ে আসতে বাঁধে বিপত্তি। মুরগির খোয়ারের দরজা ছোট হওয়ায় বস্তা হাতে বের হতে গেলে আটকে যায়। অগত্যা খোয়ারের মধ্যেই মুরগির বস্তা রেখেই তাকে বের হতে হয়। অনেক চেষ্টায় বের হতে পারলেও পালানো দায় হয়ে গেল কালুর। এ সময় পালানোর চেষ্টা করা বুদ্ধিহীনতার পরিচয়। তাই গুরুর শেখানো তত্ত্ব অনুসরণ করে খড়ের গাদার মধ্যে উট পাখির মত নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে। হোসেন মিয়ার বড় ছেলে টর্চলাইট হাতে চারদিকে একবার দেখে যায়। খোয়ারে মধ্যে মুরগি ভর্তি বস্তা দেখে সে আশ্বস্ত হয়ে বস্তাটি নিয়ে বাবা বাবা বলে ডাকতে ডাকতে বাড়ির ভেতরে ঢোকে কিন্তু কালুর উপস্থিতি টের পায়না। শেষ রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে সে রাতের কালো অন্ধকারের মধ্যেই খালি হাতেই বাড়ি ফিরে যায় এবং মনে মনে ভাবে বেঁচে গেলাম।

অগ্রহায়নের শেষ বিকেল। গ্রামের দফাদার আলিমুদ্দিন শেখ একটি তেলের টিনের গায়ে কাঠি দিয়ে আঘাত করতে করতে হাটের মধ্যে সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছে  আজ বাদ মাগরিব  সরদার বাড়িতে কালু চোরের বিচার  হবে  এই বিচারে সবাইকে হাজির থেকে উপভোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। বিকাল থেকেই সরদার বাড়িতে লোকে লোকারণ্য। সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই যে, গ্রামের ছমিরন বিবি গত ঈদে একজোড়া ছাগল উপহার পেয়েছিলো। সারাদিন ছমিরন বিবি ছাগলের পিছনে লেগে থাকে। যত্ন ভালো হওয়ায় ছাগল দুটি বেশ নাদুস নুদুস হয়ে উঠেছে। ধান কাটার মৌসুমে ছমিরন বিবি মাঠে পড়ে থাকা ধানের শীষ কুড়িয়ে আনে। কুড়ানো ধান দিয়েই ছমিরন বিবি মাসের খাবার হয়ে যায়। আজ দুপুরে ছাগল দুটি ছেড়ে দিয়ে ছমিরন বিবি ধানের শীষ কুড়াতে গেলে কালু তস্কর একটা ছাগল ধরে ফেলে। তারপর শিমের মাচার নিচে অন্ধকার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে  থাকে। কিন্তু ছাগলের চিৎকারে আশেপাশে লোকজন কালু তস্করকে ধরে ফেলে। ধরেই তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং অচেতন হওয়ার আগ পর্যন্ত এলাকার যুবকরা তাদের কর্তব্য পালন করতে থাকে। জ্ঞান ফিরলে কালু নিজেকে সরদার বাড়ির বৈঠকখানায় হাত বাধা অবস্থায় আবিষ্কার করে। সে লক্ষ্য করে শরীরের এমন কোন অঙ্গ নেই যেখানে আঘাতের চিহ্ন নেই। যথারীতি মাগরিবের নামাজ শেষে কেরামত সরদার বিচার কার্য শুরু করেন। কেরামত সরদার বলেন আজ তিনি অনেক ব্যস্ত, তাড়াতাড়ি বিচার কাজ শেষ করতে হবে। যেহেতু কালু চুরি করেছে তাই তার শাস্তি হলো হাত কেটে ফেলা। কালু তখন অস্ফুট স্বরে বলল সরদার সাহেব চুরি করার শাস্তি যদি হাত কাটাই হয়, তাহলে আপনাদের সভ্য সমাজে কতজনের হাত টিকে থাকে।  কালুর আর্তনাদের পর উপস্থিত সভাসদ নিজেদের অজান্তেই নিজের হাতের দিকে একবার তাকিয়ে নেয়। অনেকেই সন্ধ্যার মৃদু আলোয় নিজের হাতটাকে দেখতে পায় না।