চিরন্তন বন্ধন

"বন্ধু "কথাটার মাঝে এক ধরনের আলাদা মায়া রয়েছে, তাই না? বন্ধু মানেই ভালোবাসা, একরাশ হাসি ও এক মধুর সম্পর্ক যা রক্তের সম্পর্ককেও হার মানায়। প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে একজন ভালোও বিশ্বস্ত বন্ধু থাকা খুবই প্রয়োজন,যার সাথে সব কথা নির্দ্বিধায় ভাগাভাগি করে নেওয়া যাবে। বন্ধুহীন জীবন যেন মরুভূমির ন্যায়।তবে সব বন্ধুত্বই কি দীর্ঘস্থায়ী হয়? অনেক বন্ধুত্ব ভেঙে যায় ভুল বোঝাবুঝি, রাগ অভিমান আর কিছু অজানা কারণে ;যা শুধু তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এমনই কিছু অজানা কারণে ইরা ও দীপ্তির বন্ধুত্বের বিচ্ছেদ হয়েছিল। তাদের বন্ধুত্বের জুটি স্কুলের সকলের কাছে অধিক পরিচিত ছিল। কেননা তাদের মধ্যে ছিল অসম্ভব মিল ও এক অদ্ভুত ভালোবাসা। কিন্তু এক অজানা কারণে তাদের বন্ধুত্বেরও বিচ্ছেদ ঘটে। কেউ আর কারো সঙ্গে কথা বলে না, একসঙ্গে বসা তো দূর কেউ কারো দিকে চোখ তুলে তাকায় না পর্যন্ত। তবে বন্ধুত্বের মায়াজাল থেকে বেরিয়ে আসা কি এতটাই সহজ! দুজনেই কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে। মুখে না বললেও তাদের দুজনেরই ইচ্ছে ছিল আবার সবকিছু ঠিক করে নেওয়ার।কিন্তু কেউই আগে কথা বলতে রাজি নয়। তাদের মধ্যে শীতল যুদ্ধ চললেও প্রতিশোধপ্রবণ তারা কখনোই ছিল না। বন্ধুত্বের বিচ্ছেদ ঘটলেও তাদের একে অপরের প্রতি সম্মান ও গোপনীয়তার বিচ্ছেদ কখনোই ঘটে নি। এভাবে দীর্ঘ এক বছর কেটে যায় এবং স্কুল জীবনেরও সমাপ্তি ঘটে। সবাই যে যার জীবনের পথে হাঁটতে থাকে। স্কুলের সবাই ভেবেছিল, হয়তো তাদের বন্ধুত্ব এখানেই শেষ। কিন্তু সত্যিকারের বন্ধুত্বের কি কোন শেষ আছে? দীর্ঘ ছয় বছর পর স্কুলে পূর্ণমিলনীর আয়োজন করা হয়। তখন কমবেশি সবাই জীবনে প্রতিষ্ঠিত। সেই পুনর্মিলনী সকলের মতো ইরা ও দীপ্তিও এসেছিল। স্কুল জীবনের স্মৃতিচারণ করার শেষে দেখলাম, ইরা ও দীপ্তি দুজনেই অশ্রুসিক্ত অবস্থায় একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কোন এক অজানা ব্যথা যেন তাদের কাঁদাচ্ছে,ঠিক ছয় বছর আগের মতো।অবশেষে তারা তাদের সমস্ত রাগ অভিমান ছেড়ে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরল। ছয় বছর আগের মত তাদের জুটি আমরা আবারও দেখতে পেলাম! সেদিন শুধু ইরা ও দীপ্তি নয়, তাদের বন্ধুত্বের সাক্ষী সকলের চোখে পানি ছিল। আসলেই কি সত্যিকারের বন্ধুত্বের বিচ্ছেদ হওয়া সম্ভব? কিছু বন্ধুত্ব কখনোই শেষ হয় না এমনকি সময়, দূরত্ব, ভুল বোঝাবুঝিও তাদের দমিয়ে রাখতে পারেনা।ইরা এবং দীপ্তির বন্ধুত্ব ছিল সেই অনুপ্রেরণা যা সকলকে মনে করিয়ে দিল,,চিরকালীন বন্ধনই প্রকৃত বন্ধুত্বের বন্ধন।