গো-ভিডিও

Jun 1, 2024 - 15:02
Jun 9, 2024 - 14:59
 1  21
গো-ভিডিও
গো-ভিডিও, নাবা, ৮ম, রোল- ৮৯

কিছু দিন আগের কথা,আমার এক সহকর্মী, সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনে মানুষের এক পক্ষ ,আরেক পক্ষের জন্য শোষণ,বঞ্চনা ও অশান্তির কারণ ও তার প্রতিকার নিয়ে আমার সাথে মাঝে মধ্যে আলাপ করেন।আমি বলি- কি করবেন, প্রকৃতির নির্মম সত্য হলো-বাস্তুসংস্থানে সার্ভাইভ সিস্টেম। শক্তিমানের দুর্বলের উপর আধিপত্য,হরিণ বাঘ তবুও একই বনে বাস করে। তিনি বললেন- সেটা তো বেঁচে থাকার লড়াই এটাতো ভোগ- বিলাসের আয়োজন। বললাম ক্ষুধারও নানা বর্ণ থাকে! বললেন -মানব ইতিহাসে অন্যায় জুলুম প্রতিরোধের উদাহরণও আছে।

একবার কর্মস্থলে তিনি তার জলজ্যান্ত কিছু আর্থিক পাওনা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় দৈনন্দিন কাজে মনোযোগের অভাব ঘটছিল, ফলে প্রায়শই হলুদ খামের (কারণ দর্শানোর) উত্তর দিতেই তাকে বেশি ব্যস্থ থাকতে দেখা গেলো।

মনের দুঃখে আমার সেই সহকর্মী আজ কাল আর কারো সাথে কথা বলেন না, বিশ্রামাগারে নিরবে শুধু ল্যাপটপে গরুর ভিডিও দেখেন,কেউ কেউ বলেন- কি ভাই -গরুর ব্যবসা করবেন না কি?আজ কাল কে কি বলছে,কোথায় কি ঘটছে ,মানব ইতিহাসে কি লিপিবদ্ধ ,কোনো দিকে তিনি ভ্রুক্ষেপ করেন না শুধু গরুর ভিডিও দেখেই চলছেন মাসের পর মাস, আশেপাশে কানা ঘোষাও চলছে,হয়তো মস্তিষ্কের কিন্চিত বিকৃতি ঘটেছে, তা না হলে কি করে একটা মানুষ টানা ছয় মাস ধরে শুধু গরুর ভিডিও দেখেই যাচ্ছেন।

আমার দীর্ঘ দিনের কৌতুহল মিটানোর বাসনায় একদিন আমার সেই সহকর্মীকে আস্তে আস্তে জিগ্গেস করলাম-ভাই ঘটনা কি? বলেন তো!উনি আমাকে চেয়ার টেনে কাছে বসতে দিয়ে তিনটি ভিডিও দেখালেন, প্রথম ভিডিওতে -

একটি ষাঢ় দুই পা দিয়ে মাটি আঁচড়াচ্ছে,অকারণে তিড়িংবিড়িং করে লাফাচ্ছে আর ফোঁস ফোঁস করছে,আমি বললাম-মাছি ডিসটার্ব করছে নাকি?উনি বললেন- আরে না ,দেখতে থাকেন, দেখলাম ষাঢ়টির কাছাকাছি একটা গরু আসতেই তার উপর লাফিয়ে উঠলো,একটু পর দেখলাম একটা বাছুরের উপরেও লাফিয়ে উঠলো, বললাম-ষাঢ়টি কি অসুস্থ?উনি বললেন -বুঝেননা?ওরতো ধান্দা একটাই।

এবার উনি দ্বিতীয় ভিডিও চালু করলেন,

তাতে দেখলাম একটি গাভী তার সামনে থাকা চাড়ির সত্তাপানি(খাবার ) নিমিষেই শেষ করলো একেই বলে 'গো গ্রাসে খাওয়া 'তারপর ,আর কোনো খাবার নাই তবুও ঐ ফাঁকা চাড়ি চাঁটছে তো চাঁটছেই,সেই ভিডিও আর শেষ হয়না,

আমার ধৈর্যচূ্ত দেখে তৃতীয় ভিডিওটা চালু করলেন।

দেখলাম -একটি বলদ গরু বিকেলের দিকে দড়ি ছিঁড়ে এসে একটি সবুজ ধানক্ষেতে নেমে নবীন ধান গাছ খাওয়া শুরু করলো, ধানের কচি কচি ডগাগুলো মুক্ত বিহঙ্গের মতো নির্দয়ভাবে সাবার করতে থাকলো,তার পিঠের উপর একটি লম্বা লেজ ওয়ালা কালো পাখি এসে বসলো, ভিডিওতে অনেকক্ষণ পাখিটির চোখ, ঠোঁট দেখাচ্ছিলো,এদিকে সন্ধা নেমে এসেছে,নিজ থেকে গরুটি বাড়ি ফিরে যাবে তার কোনো লক্ষণ নাই,জমি প্রায় সাবার,কৃষি অধিদপ্তর এখনো ফায়ার সার্ভিসে খবর পাঠায় নাই,জমির কৃষক মালিক বরকতঊল্ল্যহ কার কাছ থেকে যেনো খবর পেয়ে একটা মোটা হালোপানটি(গরু পিটোনোর বাঁসের কন্চি বিশেষ) নিয়ে দৌড়ে এলেন এবং জমির এই বিদ্ধস্ত অবস্থা দেখে বাকরুদ্ধ হলেন,গরু টের পেয়ে লাফ দিয়ে জমি থেকে সরু রাস্তায় উঠে পরলো,সংগে সংগে জমির মালিক হালোপানটি নিয়ে গরুর পিছে পিছে দৌড়াতে থাকলেন, হঠাৎ ওয়াইফাই লাইন ডিস্টার্ব হওয়ায় ছবি হ্যং হয়ে গেলো,এমহূর্তে স্ক্রিনে স্থির চিত্রে দেখা যাচ্ছে-গরুর লেজ আলগা, গতিশীল হালোপান্টি গরুর চড়পরাতের(পিছন দিকে) দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।