এপিবিএন পাবলিক স্কুল ও কলেজ এর দরিদ্র-তহবিল ব্যবস্থাপনা

Jul 18, 2024 - 18:20
Jul 18, 2024 - 17:34
 1  30
এপিবিএন পাবলিক স্কুল ও কলেজ এর দরিদ্র-তহবিল ব্যবস্থাপনা
ইন্টারনেট

৪আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, বগুড়া কর্তৃক পরিচালিত ‘আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল ও কলেজ’ উত্তরবঙ্গের একটি ব্যতীক্রমধর্মী বিদ্যাপিঠ। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানে রেডক্রিসেন্ট, বিএনসিসি ইন স্কাউট,রোভার স্কাউট দল আছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান ক্লাব, ডিবেডিং ক্লাব,সাংস্কৃতিক দল আছে,যেখান থেকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম ও পুরস্কার অর্জন করেছে। ব্যাতিক্রমধর্মী কর্মকান্ডের জন্য বগুড়ায় এই প্রতিষ্ঠান অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। রাজনীতিমুক্ত ও কঠোর নিরাপত্তার জন্য অভিভাবকদের প্রথম পছন্দ এই প্রতিষ্ঠান। সকল পেশা ও শ্রেণির মানুষের সন্তান, বিশেষ করে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাতে নির্বিগ্নে পড়াশোনা  চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করে আসছে। দরিদ্র ও মেধাবীদের সহায়তার জন্য প্রতিষ্ঠানের একটি দরিদ্র তহবিল রয়েছে। প্রতি বছরই এ তহবিল থেকে দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের সহায়তা দেয়া হয়।

এতদিন দরিদ্র তহবিল পরিচালনা সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা ছিল না। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান সভাপতি অতিরিক্ত ডিআইজি জনাব মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বর্তমানে একটি দরিদ্র তহবিল নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

  স্মার্ট বাংলাদেশর স্মার্ট প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে সভাপতি মহোদয় বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। দরিদ্র তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্য নীতিমালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের নীতিমালাটি বাস্তবায়ন হলে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর পড়াশুনা অর্থাভাবে বন্ধ হবে না। তাকে ভাবতে হবে না মাস শেষে স্কুলের বেতন নিয়ে।

 এ তহবিল থেকে সুবিধা পেতে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। স্কুলে ওয়েব সাইট 4apbnpsc.edu.bd  থেকে poor fund নামক ট্যাবে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের আবেদন করতে হবে। পূর্বে হয়তো অনেক অস্বচ্ছল ছাত্র-ছাত্রী যারা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, কিন্তু আমাদের সম্মানীত সভাপতি মহোদয়ের মহৎ উদ্যোগের কারণে নানা বিচার বিশ্লেষণ করে সত্যিকার অর্থে সহযোগিতা পাওয়ার যোগ্য ছাত্রছাত্রীদের শনাক্ত করে তাদের সুবিধা প্রদানের পথ সুগম হয়েছে।

বছরের শুরুতেই প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী সেসন ফি হিসেবে একশত টাকা করে দরিদ্র তহবিলে চাঁদা দিয়ে থাকে। বর্তমান বছরে স্কুলের দরিদ্র তহবিলে উত্তোলিত মোট অর্থের পরিমাণ ৩,৯৫,৮০০/ টাকা। কিন্তু অনলাইন দরখাস্তকারীর সংখ্যা প্রায় তিনশত। তাই এ বছর সর্বোচ্চ  ৫০ জন শিক্ষার্থীকে দরিদ্র তহবিলের সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪,৫০,২৮৫/ টাকা ব্যয় হয়েছে। 

দরিদ্র তহবিলের আনুষ্ঠানিক সুবিধার বাইরেও প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে কর্মরত পুলিশ সদস্য ও স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীদের সন্তানদের বিশেষ ছাড় দেয়া হয়।

আমি ব্যক্তিগতভাবে দরিদ্রতহবিল ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত। দরখাস্তকারীদের সম্পর্কে নিবিড়ভাবে খোঁজ খবর নিয়ে স্কুল প্রশাসনকে সহায়তা করা আমার দায়িত্ব ছিল। তাই দীর্ঘ এক থেকে দেড় মাস ধরে আমি প্রায় তিনশত ছাত্রছাত্রীর পিতামাতা ও অভিভাবকদের পেশা, আর্থিক অবস্থা এমনকি পারিবারিক বিষেয়েও তথ্য সংগ্রহ করেছি।

তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে জানতে পেরেছি দরিদ্র তহবিলের সুবিধা প্রাপ্তির জন্য দরখাস্তকারীদের মধ্যে অধিকাংশই আসলে এই সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নয়। অনেকের বগুড়া শহরে নিজস্ব বাসাবাড়ি আছে। কেউবা ভাল বেতনের চাকরি করেন। কারো ব্যবসার ভাল পসার আছে। কিন্তু তারাও এ তহবিলের সুবিধার জন্য দরখাস্ত করেছেন। অনেকে দরখাস্তে প্রয়োজনীয় তথ্য বিশেষ করে বার্ষিক আয়ের বিষয়টি গোপন রেখে নিজেদের দরিদ্র বলে জাহির করেছে। 

অন্যদিকে এমন সব পরিবার পেয়েছি যারা অত্যন্ত দরিদ্র। দিনমজুরের সন্তান পর্যন্ত আছে। স্বামী পরিত্যাক্তা অসহায় মায়ের সন্তান রয়েছে। দরিদ্র তহবিলের সুবিধার প্রদানের ক্ষেত্রে এসব দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের সন্তানগুলোকেই বেছে নেয়া হয়েছে। দরিদ্র না হয়েও ইতোপূর্বে যারা দরিদ্র তহবিলের সুবিধা গ্রহণ করেছিলেন তাদেরকে সচেতনভাবেই বাদ দেয়া হয়েছে।

সব কিছু মিলে বর্তমানে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল ও কলেজের দরিদ্র তহবিল ব্যবস্থাপনা অধিকতর বিবেচনাপূর্ণ ও মানবিক  স্মার্ট হয়েছে।