ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা

Jun 26, 2024 - 00:19
Jun 27, 2024 - 15:33
 0  28
ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘তাদের কাউকেও যখন কন্যা সন্তানের সংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। তাকে যে সংবাদ দেয়া হয়, তার গ্লানী হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হ’তে আত্মগোপন করে; সে চিন্তা করে যে, হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দিবে, না মাটিতে পুঁতে দিবে। সাবধান! তারা যা সিদ্ধান্ত করে তা কতই না নিকৃষ্ট!’[1] এই ছিল ইসলাম পূর্ব জাহেলিয়াতের যুগে নারীদের অবস্থা। সে সময় কেউ কেউ তার কন্যাকে জীবন্ত পূতে ফেলতো। যেমন পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘যখন জীবন্ত-প্রথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে। কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?’[2] এক বর্ণনায় রয়েছে, কায়েস ইবনু আছিম বলেন, আমি জাহিলিয়াতের যুগে আমার ৮টি মেয়েকে জীবন্ত প্রোথিত করেছি।[3] অথচ ইসলাম নারীকে কন্যা, বোন, স্ত্রী এবং মাতা হিসেবে দিয়েছে অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা।

কন্যা হিসেবে মর্যাদা: আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দু’টি কন্যার লালন-পালন করবে তাদের পূর্ণ বয়স্কা হওয়া পর্যন্ত, ক্বিয়ামতের দিন সে আমার সাথে এভাবে আসবে। এ বলে তিনি নিজের আঙ্গুলিসমূহ একত্রিত করে দেখালেন।’[4]  ওকবা ইবনু আমের (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যার তিনটি কন্যা সন্তান থাকবে সে যদি তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করে এবং নিজের সামর্থ্যানুযায়ী তাদের খাদ্য প্রদান করে, পান করার ব্যবস্থা করে এবং তাদের পোশাক পরিধান করায়, তাহলে তারা ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নাম হতে অন্তরাল হবে’[5]  আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তিন জন মেয়েকে লালন-পালন করবে, তাদেরকে শিষ্টাচার শিক্ষা দিবে এবং তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করবে, অতঃপর তাদের সাথে ভাল ব্যবহার বজায় রাখবে, তার জন্য জান্নাত রয়েছে’[6]

বোন হিসেবে মর্যাদা: ইসলাম বোনের সঙ্গেও সদাচরণ করার তাগিদ দিয়েছে। আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারই তিনটি মেয়ে অথবা তিনটি বোন আছে, সে তাদের সঙ্গে স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করলে জান্নাতে যাবে।’[7]

স্ত্রী হিসেবে মর্যাদা: আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ  ‘আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও পুরুষদের উপর ন্যায় সঙ্গত অধিকার রয়েছে।[8]  

মাতা হিসেবে মর্যাদা: ইসলামে মা’কে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমার প্রতিপালক আদেশ জারি করেছেন যে তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করো।’[9] আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), মানুষের মধ্যে আমার সদ্ব্যবহারের সর্বাপেক্ষা অধিকারী ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বলেন, এরপরও তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বলেন, তারপরও তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বলেন, এরপর তোমার পিতা।[10]

মুগীরাহ (রা) বলেন, রাসূল (ছা) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর তোমাদের মাতার অবাধ্যতাকে হারাম করেছেন’।[11] 

পাপ-পূণ্যের ফলাফলের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:  “যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমরা তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমরা তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব”।[12] অপর আয়াতে তিনি বলেন:  “যাতে আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারীদের ‘আযাব দেন। আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”।[13]

নারীর আর্থ-সামাজিক মর্যাদা: আল্লাহ তা‘আলা মৃত ব্যক্তির সম্পদে নারীকে মিরাস প্রদান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “পুরুষদের জন্য মাতা পিতা ও নিকট আত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ রয়েছে। আর নারীদের জন্য রয়েছে মাতা পিতা ও নিকট আত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ, তা কম হোক বা বেশি  হোক, নির্ধারিত হারে”।[14] অপর আয়াতে তিনি বলেন: “আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদেরকে ক্ষেত্রে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ, আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক ...”।[15] এভাবে আল্লাহ তায়ালা একজন নারীকে মা, মেয়ে, বোন ও স্ত্রী হিসেবে মিরাস দান করেছেন। আবার নারীর জন্য পুরুষের ওপর দেন-মোহর অবধারিত করে তিনি বলেন: ‘আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও, অতঃপর যদি তারা তোমাদের জন্য তা থেকে খুশি হয়ে কিছু ছাড় দেয়, তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তিসহ খাও।’[16] নারী যা উপার্জন করবে তা তারই। সেটা জোর করে নেয়ার অধিকার পুরুষের নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর পুরুষদের জন্য রয়েছে অংশ, তারা যা উপার্জন করে তা থেকে এবং নারীদের জন্য রয়েছে অংশ, যা তারা উপার্জন করে তা থেকে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে তার অনুগ্রহ চাও। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।[17] তিনি আরো বলেন: হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা জোর করে নারীদের ওয়ারিশ হবে।[18] এভাবে ইসলাম নারীর ব্যক্তি স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে তাকে যথাযথ সম্মান দিয়েছে।

[1]  সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৫৮-৫৯।

[2] সূরা আত-তাকবীর, আয়াত: ৮-৯।

[3] ত্বাবারানী, ইবনু কাছীর হা/৭১৭২।

[4] মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫০।

[5] ইবনু মাজাহ হা/৩৬৬৯, ছহীহাহ হা/২৯৪।

[6] আহমাদ হা/১১৮৬৩।

[7] তিরমিজি, হাদিস : ১৯১২।

[8] সূরা আল-বাক্বারাহ, আয়াত: ২২৮।

[9] সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৩।

[10] সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৩৯৪।

[11] বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯১৫। 

[12] সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৯৭ 

[13] সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৭৩

[14] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৭ 

[15] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১ 

[16] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪

[17] সুরা নিসা, আয়াত: ৩২

[18] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯ 


Md. Raihanur Rahman Assistant Teacher of Armed police Battalion public school and College, Bogura