আমাদের সূর্যের অসুস্থতা ও মৃত্যু প্রক্রিয়া 

Aug 29, 2024 - 12:05
Aug 29, 2024 - 23:55
 1  29
   আমাদের সূর্যের অসুস্থতা ও মৃত্যু প্রক্রিয়া 
নাম: আতকিয়া আনজুম তাশা, রোল:২৭২,

 বিগব্যাং বা মহাসম্প্রসারণ তত্ত্বানুসারে, আজ থেকে প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে জন্মের সূচনা হয়েছিল আমাদের মহাবিশ্বের। মহাজগতের সৃষ্টির প্রায় সাড়ে পাঁচ বিলিয়ন বছর পর সৃষ্টি হয়েছিল আমাদের সৌর জগতের কেন্দ্র সূর্যের। জন্মের নিরিখে আমাদের সূর্য তার যৌবনকাল পার করছে এখন। কারণ আমাদের সূর্যের সমান ভরের কোন তারার জীবনকাল দশ থেকে বার কোটি বছর। কিন্তু কিভাবে মৃত্যুবরণ করবে আমাদের এ প্রাণের সূর্য?

অন্যান্য তারার মতো আমাদের সূর্যও একটি গ্যাসীয় পদার্থ। এর মধ্যে আছে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস। বিগ ব্যাঙের শুরুতে জগতে কোন বস্তু বা ম্যাটার ছিল না। তখন সব কিছু ছিল শক্তিরূপে। শক্তিগুলো থেকে তৈরি হয় বস্তুর। হাইড্রোজেন হল মহাবিশ্বের সৃষ্ট  প্রথম পদার্থ। তাই এর গঠন সবচেয়ে সরল ও ভরও সবচেয়ে কম। একটি ইলেক্ট্রন ও একটি প্রোটন দিয়ে হাইড্রোজেন পরমাণু গঠিত হয়। সূর্যের প্রায় পঞ্চান্ন শতাংশই হাইড্রোজেন। হাইড্রোজেন পারমাণবিক ফিউসনের মাধ্যমে একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে হিলিয়ামে পরিণত হয়। এতে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তাই সূর্যকে সচল বা জীবীত রাখে। অথচ শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রতিনিয়ত ক্ষয় হচ্ছে সূর্যের হাইড্রোজেন। এক সময় শক্তি উৎপাদনের জন্য সূর্যের কেন্দ্রে পর্যাপ্ত হাইড্রোজেন থাকবে না। ফলে অসুস্থ হয়ে পড়বে আমাদের প্রাণদায়ী সূর্য। এ অসুস্থতাই ডেকে আনবে তার ধ্বংস।

আজ থেকে প্রায় পাঁচশ কোটি বছর পরে সূর্যের বয়স প্রায় হাজার কোটি বছর হবে। তখন আমাদের সূর্য হয়ে পড়বে একটি প্রবীণ নক্ষত্র। তখন সূর্যকে পূর্ণভাবে সক্রিয় রাখার জন্য পর্যাপ্ত হাইড্রোজেন থাকবে না। ফলে ফিউশন প্রক্রিয়াও থমকে যাবে। তৈরি হবে না প্রয়োজনীয় শক্তি। প্রয়োজনীয় তাপ শক্তির অভাবে আমাদের বিশাল গোলকাকৃতির সূর্য তার কেন্দ্রের সাথে বহিরাবরণের চাপের সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পারবে না। ফলে সূর্যের ভিতর অবস্থিত কণিকাগুলো সংকুচিত হয়ে কেন্দ্রের দিকে একত্রিত হতে থাকবে। অন্যদিকে, বাইরের অংশটি কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রসারিত হতে থাকবে। ফলে সূর্যকে দেখাবে বর্তমানের চেয়ে অনেক বড় ও উজ্জ্বল।


কেন্দ্রের তাপমাত্রা অত্যধিক হওয়ায় অসুস্থ সূর্যের কেন্দ্রে অবস্থিত হিলিয়াম পরমাণুগুলো ফিউশন প্রক্রিয়ার হিলিয়ামের চেয়েও ভারী বস্তুর জন্ম হবে। অন্যদিকে, সূর্যের বাইরের স্তরটি দ্রুত প্রসারিত হয়ে শীতল হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় সূর্যকে অনেক বড় ও লাল দেখাবে। তখন একে বলা হবে লোহিত দৈত্য (Red giant) । সূর্যের এমন দশা মাত্র কয়েক কোটি  বছর স্থায়ী হবে।  

লোহিত দানব দশায় সূর্যের কেন্দ্র আরো বেশি সংকুচিত ও উত্তপ্ত হয়ে পড়বে।  তখন সূর্যের জ্বালানিরূপী হাইড্রোজেন নিঃশেষ হবে এবং হিলিয়াম গ্যাসও সংশ্লেষণের মাধ্যমে কার্বনের মতো ভারী মৌল তৈরি করবে। এ  অবস্থায় সূর্যের কেন্দ্র কার্বনের গরম দলা বা তালে পরিণত হবে। এ তাল দেখতে লাল নয় বরং সাদা হয়ে পড়বে। সূর্যের এ অবস্থাকে বলা হবে শ্বেত বামন (White dwarf) ।

সূর্য ও এর সম পর্যায়ের ভর সম্পন্ন তারকাগুলোর পরিবর্তিত শ্বেত বামন অবস্থায় আশ্চর্য ধরনের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকবে। শ্বেত বামনের ভর সূর্যের ভরের প্রায় সমান হলেও এর আয়তন হবে খুবই ছোট;  প্রায় পৃথিবীর অনুরূপ। এমতাবস্থায়, এর ঘনত্ব এত বেশি হবে যে এক চা চামুচ পরিমাণ শ্বেত বামন বস্তুর ভর হবে পৃথিবীর নিরিখে এক টনেওর বেশি। সাধারণ পদার্থ বিজ্ঞানের কোন নিয়মই তখন এখানে কার্যকর হবে না। এসব বস্তুতে একত্র রাখার জন্য তখন কার্যকর হবে কোন্টাম পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রসমূহ।

 

এক দিকে সূর্যের কেন্দ্রটি যখন শ্বেত বামনে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া থাকবে, তখন সূর্যের বহিরাবরণটি কেন্দ্র থেকে বিছিন্ন হয়ে মহাশূন্য ছড়িয়ে পড়বে।  তখন এর তাপমাত্রা আরও কমতে থাকবে। একই সাথে কমতে থাকবে ভরও। আমাদের গ্যালিক্সর মধ্যে তখন এ অংশটি মেঘ, ধুলির মতো অনুজ্জ্বল পদার্থ বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে থাকবে। এ অবস্থায় এটা পরিণত হবে একটি আংটির আকারের বৃহৎ নেবুলায়। এ ধরনের নেবুলাকে বলা হবে ‘প্লানেটরি নেবুলা’। আমাদের ছায়াপথে গ্যাসের মেঘ ও ধুলিকণার বেশ কিছু অংশ এই প্লানেটরি নেবুলা দিয়েই তৈরি।

 

অন্যদিকে সূর্যের কেন্দ্র থেকে তৈরি হওয়া শ্বেত বামন অংশটি আরও বেশি শীতল হয়ে উজ্জ্বলতা কমতে কমতে সহস্র বিলিয়ন বছর পরে তা কালোবর্ণের বস্তুতে পরিণত হবে যাকে বলা হবে ‘কৃঞ্চ বামন (Black dwarf) ।  এভাবেই আমাদের পৃথিবীতে আলো ও তাপ দেয়া সূর্যটি ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তার ধ্বংসাবশেষগুলো আমাদের গ্যালাক্সিতে নিস্ক্রিয় বস্তুরূপে অবস্থান করবে।

 

এখন প্রশ্ন হল, সূর্যের মৃত্যু হলে তাকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা গ্রহ উপগ্রহ গুলোর কি হবে? এ প্রশ্নের উত্তরের শুরুতেই বলতে হবে, আমাদের গ্রহগুলোর ভিত্তিই যখন ধ্বংস হবে, তখন এর উপর নির্মিত ইমারতের অক্ষত থাকার কোন সুযোগ নেই। বরং সূর্যের প্রাণবায়ু বের হওয়ার অনেক আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে আমদের সাধের পৃথিবী। সৃর্যের জ্বালানী ফুরোবার প্রাক্কালে তা যখন লোহিত দানবে পরিণত হবে, তখন তার বাইরের অংশটি এত বেশি প্রসারিত হবে যে তা বুধ, শুক্র ও পৃথিবীকে অতিক্রম করে মঙ্গল গ্রহ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। তখন এর প্রচন্ড তাপ ও চাপে পৃথিবীর সব কিছুই বাষ্পে পরিণত  হয়ে প্লানেটারি নেবুলার গ্যাসের অংশে পরিণত হবে।


মোঃ আব্দুর রাজ্জাক জনাব মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এর জন্ম রংপুর জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত ও অপরাধ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। পেশায় একজন পুলিশ অফিসার। বর্তমানে ৪ এপিবিএন, বগুড়ার অধিনায়ক