আকালের দিনে

আকালের দিনে

Jun 27, 2024 - 02:16
Jul 7, 2024 - 14:06
 0  16
আকালের দিনে
সাজিয়া আফরিন প্রত্যাশা ৯ম

বিজ্ঞানের সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনা যখন মানুষের হাতের মুঠোর বাইরে ! শিক্ষা কেবলি স্বাক্ষরের সীমায় আবদ্ধ !ফসলী জমিগুলো বীজ, পরিকল্পনা আর খাদ্যাভাবে অপুষ্ট নারীর মত অনুর্বরা, উৎপাদনক্ষম ! বিপণন আর বাণিজ্য যখন ঋতুকেন্দ্রীক ! বৃহৎ গ্রামাঞ্চল যখন খাদ্যাভাবে আতঙ্কগ্রস্ত ! পরিবারগুলো তখনও সন্তান উৎপাদনের ক্রমশ বৃত্তচক্রে নির্লিপ্ত, নিমজ্জিত ।

অনিয়ন্ত্রিত জন বিস্ফোরণে সঞ্চিত চাল সময়ের আগেই শেষ হয় বলে বেশিরভাগ পরিবারই খাদ্য সঙ্কটে ভোগে। গমের রুটি ও ঝাল, গমের ভাত,আলুর খিচুড়ি,আলুর ভাত, মিষ্টি লাউ সিদ্ধ, খেসারি ডাল ও কাঁঠাল সিদ্ধ,খই প্রভৃতি খেয়ে ভাতের অভাব মেটাতে চেষ্টা করে। কখনও অযাচিত আত্মীয়ের আগমনে প্রতিবেশীর কাছে ধার করে অথবা জমা রাখা বিছুন ধান থেকে কিছু ধান সিদ্ধ করে চুলার তাপে বড় পাতিলে শুকিয়ে ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে দুবেলা অতিথি ভোজের ব্যবস্থা করে কষ্টসহিষ্ণু নারীরা। ঠিক তখনও আদিম প্রবৃত্তির অভ্যাসে ভাতের নতুন থালার সাথে প্রতি বছর যুক্ত হয় নতুন সদস্য এবং। তবে মানিক বাবুর অভিজ্ঞতার মত অভ্যর্থনাহীন নিরানন্দে!

চারপাশের অন্নসঙ্কট মাড়িয়ে কিছু বাড়ি সুখের পুষ্পগন্ধিতে মাতে। অন্নচিন্তা অন্নপূর্ণার ঘাড়ে দিয়ে খায় সরু শুভ্রা ভাত। তেমনি একটি স্বচ্ছল পরিবার মন্ডল বাড়ি। জাগতিক পারিপার্শ্বিকতা ভুলে নিত্য সে বাড়ির গৃহিণী আরামী সুতি শাড়ির আঁচল মাথায় টেনে রাঁধে দু-চুলায় ভাত, শিং-কৈয়ের ঝোল। ভাতের গরম বলকগন্ধ নেশার মতো টানে দশ বছরী বালক আছিরকে ।কোথা থেকে ছুটে এসে বাঁশের খুঁটিতে হেলান দিয়ে তাকিয়ে থাকে ফুটন্ত বলকজলে।বুক ভরে টেনে নেয় উত্তপ্ত ভাতগন্ধ।এ গন্ধ বহু যুগের!চির চেনা!এ গন্ধ পরম প্রাপ্তির!এ গন্ধের অপেক্ষায় কত যুগ ধরে তার বাবা,মা,ভাই,বোন..পরিবার, সমাজ, গ্রাম, জেলা,দেশ...!

আছির ভ্রমচেতনে দেখে নেশা গন্ধে মাতাল অনাহারী, অর্ধাহারী শত শত শিশু,কিশোর যুবক,বৃদ্ধ অনাদি কালের জঠর জ্বালা নিয়ে দাঁড়িয়েছে তার পাশে। চোখে ক্ষুধার নিরস গদ্য। সচেতনে নড়ে উঠে সুখী স্বচ্ছলাদের চিৎকারে সর,সর!যা যা! বাড়ির ক্ষুধার্ত ল্যালপা কুকুরটি যেমন লাঠির আঘাত সহ্য করেও অবস্থানে অটল উচ্ছিষ্টের আশায়, তেমনি সব লাঞ্ছনা সহ্য করে খুঁটির সাথে শরীর শক্ত করে এঁটে দাঁড়িয়ে থাকে সে। ধস্তাধস্তি বেশি হলে বসে পড়ে কিংবা কুকুরের মতো শুয়ে পড়ে।

মাটির কাসায় মাড় নিংড়ে ভাত আর তরকারির পাতিল নিয়ে যায় দীঘল বারান্দায় মন্ডল গিন্নী। অপেক্ষারত ছেলে-মেয়েদের থালায় বাড়ে সুখের ভাত।আছিরের চোখ বাড়ানো ভাতের দিকে নয়, উঠানে রাখা গরম মাড়পূর্ণ কুকুর চাটা কাসার দিকে। একটা লম্বা পাটকাঠি দিয়ে দূর থেকে চুষে নেয় গরম মাড়। ঠাণ্ডা করে খাবার সময়টুকু তার নেই। ক্ষুধা আর গরুর জন্য নির্ধারিত মাড়টুকু হারানোর ভয়ে। দ্রুত খেতে গিয়ে প্রায় মুখ পুড়িয়ে ফেলে। তবু সবার অলক্ষ্যে পেট ভরাতে ক্রমাগত টেনে নেয় ভাতগন্ধী পাতলা তরল! অসহায় কুকুরটিও কাসার পাশে জিভ বের করে অপেক্ষায় গরম তরল সহনীয় মাত্রায় আসার!

 আর তখনও সুখের ভক্ষণে মগ্ন মন্ডল বাড়ি!!