অসম ব্যবধান

বগুড়া শহরের অদূরে সাইক হাসপাতাল । সরু তন্বী ছিপছিপে মেয়ের মত । খোলা বারান্দায় দাঁড়ালে রাজপথের অনেকটা দূর পর্যন্ত দেখা যায়। আকাশও বুক ভরে অনুভব করা যায়।মাঝে মাঝে ছোট ছোট গাছগুলো লম্বা সারির মত বহুদূর । বাবুই পাখির দলবদ্ধ সুখাবাস। মানুষের মত বিচ্ছিন্ন নয় । বিপরীত পাশে সমস্ত বিপদের দায় নিয়ে মাথা উঁচিয়ে দাম্ভিক ফায়ার সার্ভিস অফিস। কাছে, দূরের দুর্ঘটনার আগুন, প্রতিশোধের আগুন, নিয়ম ভেঙে জ্বলে উঠা দৃশ্যমান আগুন নেভাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও_ঘরের আগুন,মনের আগুন নেভানোর কোন দায় এদের নেই। কর্মী এবং গাড়ি বহর প্রস্তুত সব সময় যুদ্ধের। সম্মুখ যুদ্ধে শেষ বিজয় তাদেরই । ওদের টাইমগোনা ঘণ্টাধ্বনিতে নিশ্চুপ রাতে বুক ধক করে উঠে অকারণ। মৃত্যু-পথের যাত্রীরা হয়তো এ ঘণ্টাকে জীবনের শেষঘণ্টা ভেবে প্রহর গোনে । জীবন মৃত্যুর খেলায় কেউ বাজিমাৎ করে , কেউ হেরেও যায়।
পাশে আকাশচুম্বী দৈত্যের মতো পপুলার হাসপাতাল একটু বেশিই পপুলার।পা রাখার জায়গা নেই। মনে হয় যেন পুরো বাংলাদেশের চিকিৎসার ভার এটি নিজেই নিয়েছে । এই হাসপাতালের ছাদে অসংখ্য শান্তির কপোত। ভিতরের রোগ,মৃত্যু, হতাশা ছাড়িয়ে কিছুটা প্রশান্তির বার্তা ছড়ায়। অপসময়ের অশান্তি কপোত ডানায় ভাসিয়ে দিতে পারলে ই, স্বস্তি মিলতো। কিন্তু কপোতও দুঃখবাণে কাতর। সাইকের উত্তর পাশে ভাই পাগলা মাজার ও কবরস্থান। জাগতিক জীবন-যন্ত্রণা থেকে মুক্তির পুণ্যস্থান। সম্প্রীতির এক লাইনে সবাই ঘুমিয়ে । সাইকের ডাক্তাররা ভীষণ দামি।ডিমান্ডেবল । এসি কেবিন, ঝকঝকে ওয়াশ রুম ,ঝটপট চিকিৎসা সত্যিই প্রশংসার। এখানে দামির পাশাপাশি কিছু অদামি লোকও রয়েছে । যারা হাসপাতালের ফিটফাট চেহারা এবং শারিরীক ব্যালেন্স ঠিক রাখে। পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তেমনি একজন তরুণ মনির।পরিশ্রমী,শিক্ষিত। নববধূর মধুর পরশ ছেড়ে করে নাইট ডিউটি, কেবিন রেডি,প্রস্রাব ব্যাগ,ড্রেন লাইন পরিষ্কার । কেবিন ছাড়া আর উঠার সময় রোগীর আপনজনকে গুনতে হয় এক পকেট টাকা । ডাক্তার আর মালিকের মোহসুখ বাড়ে।নাম,খ্যাতি শহর ছেড়ে পৌঁছে দূর-সুদূরে।মেশিনপাতি আর যন্ত্রশরীরে লাগে সময়ের ঢেউ। কিন্তু তখনও মনির-রা একশো টাকা বখশিশের সুখস্বপ্নে জাগে নির্ঘুম বহু বহু রাত.. বাড়তে থাকে অসম ব্যবধান.. অন্যদিকে কাফন রঙা মৃতের মিছিল ক্রমশ দীর্ঘ হয়..।
তখন ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে দূরগামী বাস এক শহর স্বপ্ন নিয়ে চলে যায়... দূরে অনেক দূরে...