অলিখিত রোজনামচা

Nov 25, 2024 - 12:58
Dec 6, 2024 - 11:32
 0  10
অলিখিত রোজনামচা
ইন্টরনেট হতে সংগৃহীত

মতি সবে আই.এ ক্লাসের ছাত্র। চোখে স্বপ্ন অবাধ। সবকিছু ছাড়িয়ে যাওয়ার,জয় করবার দৃঢ় মনোবল। কলেজের বারান্দায় মেঘকেশীর হঠাৎ হেঁটে যাওয়া দুলুনির রেশ তার বুকে।অজান্তে মনের কোণে একরকম টান বাড়ে দূরের মেয়েটির জন্য।ক্যাম্পাসের বুড়ো বটগাছের পাশ দিয়ে অকারণ হাঁটে আর নীরবে খোঁজে মেঘকেশীর অতিক্রমের মুগ্ধতা।

সে প্রতাপী তরুণ ! ভিতরে উদ্দাম পৌরুষ! মিছিলে যাবার আনন্দ, রক্ত টগবগ করা মাতাল নেশা!সবার সাথে যখন মুক্তির শ্লোগান বলে, তখন বুকের ছাতিটা প্রশস্ত আকাশের মতো বড় হয়।সে তখন অন্য এক মানুষে রূপান্তর হয়।২৫শে মার্চ বিভীষিকাময় কালো অধ্যায়ের নির্মমতায় পুরো দেশময় আতঙ্ক। রক্তে ভাসে বৃহৎ অঞ্চল। ছাত্র-তরুণরাই পাকিস্তানি সেনাদের বড় টার্গেট।প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়ায় দেশ এবং বাইরে।

একদিন প্রখর,তপ্ত দুপুরে মতির বড় চাচা তাকে ডেকে বললেন,'তোর মতো ছাত্রদের, তরুণদের ওরা বেছে বেছে হত্যা করছে। জাতির প্রাণ ধ্বংস করলে ওরা সহজে দেশকে দখলে নিতে পারবে।তাই এ মরণ খেলা! শোন, চুপচাপ তাদের হাতে প্রাণ দেওয়ার চেয়ে দু'চারজনকে মেরে মর '।এমন অগ্নিবাণীতে মতির চোখে ঝিলিক দিয়ে উঠে আগুন।সাহসের পাহাড় নিমিষেই আকাশ ছোঁয়।ঘোর ভ্রমে দেখে পশুদের রক্তমাখা লাশ আর তার হাতে শিকারী রাইফেল!ক্ষণিকেই বদলে যাওয়া মতি যেন নিজেকেই চিনতে পারে না।তারপর যুদ্ধে যোগ দিতে ভারতে যায় প্রশিক্ষণে।অস্ত্র চালানোর কৌশলসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ হয়। অংশ নেয় পাকিস্তানি নিধন কর্মযজ্ঞে।

অপারেশনে অনেক সহযোদ্ধাদের হারায়,সফল হয়। বগুড়া এবং জয়পুরহাটের সীমান্ত শিবগঞ্জ ব্রিজ। সেখানে রাজাকার সহ প্রায় একুশ জনের একটি টিম। অপারেশন শুরু। গুলির শব্দে আকাশ ভেঙে পড়ার মত অবস্থা। পাঁচ -ছয় মিনিট যুদ্ধ শেষে পরিতৃপ্তির হাসি হাসে মতি ও যোদ্ধারা।

সুযোগ পেয়েও একবার কয়েক জন রাজাকারদের না মেরে তাদের কান কেটে ছেড়ে দেয়। মাটিতে লাফানো কান নিয়ে দৌড় দিয়েছে নির্লজ্জের দল।আর একদিন পাকিস্তানি এক সৈন্যকে ধরে তার লিঙ্গ কর্তন করে। মতির সহযোদ্ধা বলে 'আমাদের উপর অকথ্য নির্যাতন করেছে এরা। আরও ভয়ংকর শাস্তি ওদের প্রাপ্য'।সারারাত ধরে হেঁটে হেঁটে যুক্ত হয় দেশমাতার মুক্তির মিছিলে।ফুলো পায়ে গরম পানির উষ্ণতায়,পা গুলোকে সচল করে,আবার হাঁটে অপারেশনে। হাঁটু আর কনুতে ভর করে ক্রমাগত নিধন চলে বিভিন্ন অপারেশনে। অনিদ্রা , অনাহার আর বৈরী পরিস্থিতি মাথায় নিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে বৃহৎ স্বার্থে।চায় আপামর মুক্তি। অপ্রতিরোধ্য মতি থামে না।এক টুকরো ভূ-খণ্ডের দাবিতে ঘরে ঘরে অপেক্ষায় যে হাজারো দুখী মা।

হিংস্র ক্ষুধায় স্মৃতি ভ্রমে স্বাদ নেয় ভারত প্রশিক্ষণে ঘিয়ে ভাজা বরাদ্দকৃত একটি পরাটা ও পাঠার দু-তিন পিচ মাংসের। উজ্জীবিত হয় আবারও।

একদিকে সহযোদ্ধা হারানোর,প্রিয় হারানো বেদনার অলিখিত রোজনামচা বড় হয়, অন্যদিকে চ্যালেন্জ বাড়ে উড্ডীয়মান লাল সবুজের।