অমুসলিমদের সাথে আচরণ

Sep 23, 2024 - 19:12
Sep 26, 2024 - 12:14
 0  4
অমুসলিমদের সাথে আচরণ
https://chattolarkhabor.com

অমুসলিমদের সাথে আচরণ

মো: রায়হানুর রহমান, সহকারী শিক্ষক

ইসলামের দৃষ্টিতে সকল মানুষ আদম ও হাওয়া (আ) এর বংশধর। এ হিসেবে জাতি- ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ ভাই ভাই। তাই সকলের সাথে ন্যায় সংগত আচরণ করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য আবশ্যক। মুসলিম হোক বা অমুসলিম, কারো প্রতি জুলুম করা ইসলামে হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে পছন্দ করেন না।[1] তিনি আরো বলেন, হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষ্যদানকারী হিসেবে সদা দণ্ডায়মান হও। কোনো জাতির প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনোভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর।[2]

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘দ্বী সম্পর্কে কোন জোর-জবরদস্তি নেই; সত্য পথ ভ্রান্ত পথ থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে[3] আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, তোমাদের দ্বী তোমাদের, আমার দ্বীন আমার[4] রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় বসবাসকারী অমুসলিমদের সঙ্গে লিখিত চুক্তি সম্পাদন করেন, যা মদিনা সনদ নামে পরিচিত মহানবী (সা.)-এর পাশ দিয়ে একসময় একটি লাশ নেওয়া হয়েছিল তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন তাঁকে বলা হলো, এটা তো এক ইহুদির লাশ তখন তিনি (সা) বলেন, তা কি প্রাণ (মানুষ) নয়?[5]  এক ইহুদি বালক নবী (সা.)-এর খেদমত করত সে অসুস্থ হলে নবী (সা.) তাকে দেখতে গেলেন তার মাথার দিকে বসে নবীজি (সা) বলেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ করো তখন সে তার পিতার দিকে তাকাল পিতা বলেন, তুমি আবুল কাসেমের (নবীর) অনুসরণ করো ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করল তখন নবী (সা.) এই বলে বের হলেন, আল্লাহর শুকরিয়া, যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন[6]

আত্মীয়-স্বজন অমুসলিম হলেও তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে বলা হয়েছে আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বলেন, রাসুলের যুগে আমার মা আমার কাছে এলেন মুশরিক অবস্থায় তখন আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, আমার মা এসেছেন, তিনি অমুসলিম আমি কি তাঁর আত্মীয়তা রক্ষা করব? নবী (সা.) বলেন, হ্যাঁ, তাঁর সঙ্গে আত্মীয়তা রক্ষা করো[7] হযরত উমর (রা) একদিন এক ইহুদি বৃদ্ধকে দেখলেন মসজিদের দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করে বেড়াতে। তখন তিনি ইহুদিকে লক্ষ্য করে বললেন, আমরা তোমার ওপর ইনসাফ করতে পারিনি, যদি তোমার যৌবনে আমরা তোমার নিকট থেকে জিয্য়া গ্রহণ করে থাকি আর তোমার বার্ধক্যে তোমাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেই। এরপর তিনি তার জন্যে বায়তুল মাল থেকে প্রয়োজনীয় ভাতার ব্যবস্থা করে দেন।[8]

কেউ কেউ মনে করেন ইসলামে জিহাদ মানেই অমুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ইসলামে কেবল তাদের বিরুদ্ধেই জিহাদ করতে বলা হয়েছে, যারা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, (ইসলামী) রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে। হোক সে অমুসলিম কিংবা কোন নামধারী মুসলিম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; কিন্তু সীমালংঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালংঘনকারীদেরকে ভালবাসেন না।[9] আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ হতে বহিষ্কার করেনি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ন্যায় বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায় পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন।। আল্লাহ শুধু তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেছে এবং তোমাদেরকে বহিষ্করণে সহযোগিতা করেছে তাদের সাথে যারা বন্ধুত্ব করে, তাঁরাইতো অত্যাচারী[10] তাছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) (সৈন্যদল প্রেরণকালে) বলতেন, (যুদ্ধক্ষেত্রে) তোমরা বাড়াবাড়ি করবে না, ভীরুতা দেখাবে না, (শত্রুপক্ষের) কারো চেহারা বিকৃতি ঘটাবে না, কোনো শিশুকে হত্যা করবে না, কোনো গির্জা জ্বালিয়ে দেবে না এবং কোনো বৃক্ষও উৎপাটন করবে না।[11] রাসূলুল্লাহ (সা) আরো বলতেন, : তোমরা গির্জার অধিবাসীদের হত্যা করবে না।[12]

অমুসলিদের উপাসকদের গালী দিতে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ ইরশাদ করেন, তারা আল্লাহ তাআলার বদলে যাদের ডাকে, তাদের তোমরা কখনো গালি দিয়ো না, নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহ তাআলাকে গালি দেবে, আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই তাদের কার্যকলাপ সুশোভনীয় করে রেখেছি, অতঃপর সবাইকে একদিন তার মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে, তারপর তিনি তাদের বলে দেবেন, তারা দুনিয়ার জীবনে কে কী কাজ করে এসেছে[13]

কেউ যদি কোন অমুসলিমের প্রতি অবিচার করে, তাহলে কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (সা) স্বয়ং তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘সাবধান! যদি কোনো মুসলিম কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তার অধিকার খর্ব করে, তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেয় এবং তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক নিয়ে যায়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি তার (অমুসলিমের) পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন  করব।[14]  আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, যে ব্যক্তি মুসলিম কর্তৃক নিরাপত্তা প্রাপ্ত কোনো অমুসলিমকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার ঘ্রাণ পাওয়া যায় চল্লিশ বছরের পথের দূরত্ব থেকে[15] আবী বাকরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, যে ব্যক্তি চুক্তিতে থাকা কোনো অমুসলিমকে অসময়ে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন[16]

অমুসলিমদের সাথে আচরণের এসকল সুস্পষ্ট বিধান থাকা সত্তেও যারা অমুসলিমদের উপর অত্যাচার করে, তাদের উপাসনালয়ে আক্রমণ করে তারা কখনো প্রকৃত মুসলিম হতে পারে না। আমাদের উচিত মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকল মানুষের সাথে সদাচারণ করা।

 



[1] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৫৭ ১৪০

[2] সূরা আল-মায়িদা, আয়াত:

[3] সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৬

[4] সুরা আল-কাফিরুন, আয়াত:

[5] সহিহ বুখারি: ১৩১২

[6] সহিহ বুখারি: ১২৯০

[7] সহিহ বুখারি: ২৪৭৭

[8] কিতাবুল আমওয়াল, ইবনে যানজূয়াহ্, /১৪৩, হাদীস ১৭৯।  

[9] সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৯০।

[10] সূরা মুমতাহিনাহ, আয়াত: -

[11] আবদুর রাযযাক, মুসান্নাফ:৯৪৩০

[12] ইবন আবী শাইবা, মুসান্নাফ : ৩৩৮০৪; কিতাবুল জিহাদ

[13] সূরা আল আনআম, আয়াত ১০৮

[14] আবূ দাঊদ : ৩০৫২

[15] সহিহ বুখারী:৩১৬৬।

[16] আবূ দাঊদ:২৭৬০, নাসাঈ:৪৭৪৭ 


Md. Raihanur Rahman Assistant Teacher of Armed police Battalion public school and College, Bogura