অপদার্থই পদার্থ -১

একটি সায়েন্স ফিকশনাল নভেল

Sep 18, 2024 - 23:48
Sep 20, 2024 - 05:55
 1  11
অপদার্থই পদার্থ -১

অপদার্থই পদার্থ -১

(অপদার্থই পদার্থ -১ লেখাটি গত ৫-৬ মাস আগে এপবন জার্নালে প্রকাশিত হয়।কেউ পর্ব-১ না পড়লে পর্ব-২ বুঝতে পারবে না।তাই আবরো দিয়ে দিলাম পর্ব-১।কেউ আগে থেকে পড়ে থাকলে স্ক্রল করে পর্ব-২ পড়া শুরু করুন।)

আজ সকালের হায়ার ম্যাথ পরীক্ষা দেয়ার পর থেকে মাথায় অসহ্য ব্যাথা শুরু হয়।একে বিষন্নতা বলা যেতে পারে।যাই হোক,কাল পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা। তাই,বিশ্রাম নেয়ার বালাই নেই।বাসায় এসে বসে পড়লাম টেবিলে। বইয়ের মধ্যে মাথা গুজে জ্ঞান আহরণের চেষ্টা চললো অনেক্ষণ।অবশ্য প্রস্তুতি ভালোই ছিলো।সময় কেটে গেল স্রোতের মত।মাঝে নাওয়া খাওয়ার জন্য বরাদ্দ ছিল শুধু ২টি ঘণ্টা। বাকি -১০ ঘণ্টা  ছিল পড়ার জন্য। এতো পড়ার হয়তো লাভ নেই, কিন্তু এত শুধু আত্মার শান্তি। পরীক্ষার আগে এরকম পড়া খারাপ নয়।আগের বারের পরীক্ষ খারাপ হওয়ায় এবার তা হতে দেয়া যাবে না।এই পড়ার মাঝে এতটাই মগ্ন ছিলাম যে টেরই পাইনি সারে ৯টা বেজে গেছে।কখন যে চোখ লেগে গেল টেরই পেলাম না।

পরদিন সকাল :০০ টা বোধ হয়।৯:৩০ পরীক্ষা। তাই আগে ভাগে তৈরি হয়ে গেলাম চট পট।ব্রাশ -গোসল শেষ।হটাৎ মনে পরলো আজ মা ঘুম থেকে ডাকল না।তাই তারাতারি মার রুমে গেলাম।দেখলাম মা বিছানায় শুয়ে আছেন ডান কাত হয়ে।মাকে ডাকার জন্য ঘারে হাত দিতেই টের পেলাম মার অনেক জর। তা অবশ্য ব্যাপার না। ২দিন কাজের বুয়া না আসলে এই দশা সাধারণ।

মাকে ডাকতেই মা বললেন, "না খাইয়া যাস না।বুয়া আসলে নাস্তা বানায় দিবে।খে যাস।"

আমি বললাম,"না,সময় নাই।এসে খাব।"

মা হাতে ২০০ টাকা ধরায় দিয়া বলে,"খাওয়ার জন্য ১০০ টাকা দিলাম রাস্তায় কিছু খে নিস।

মনোযোগ দিয়ে লিখবি।এবার জেনো পদার্থবিজ্ঞানে ১০০ পাওয়া হয়।"

আমি বললাম,"ইনশাআল্লাহ। "

 

বের হলাম বাসা থেকে। সিড়িতে দেখা হলো এক বুড়ো প্রতিবেশীর সাথে। সালাম দিলাম কিন্তু এই ভদ্রলোক সালাম নিলেন না।তাই একে ভদ্রলোক বলাযায় না।মনে মনে গালাতে গালাতে এগিয়ে গেলাম।একটা রিকশা দারিয়ে আছে বাহিরে।কিন্তু আমি ডাকার পরও এক বৃধ্য মহিলা তা নিয়ে নিলেন। কিন্তু বকে কেন জানি শান্তি অনুভব হল।নানির বয়সি হওয়ায় নিজের নানির কথা সরণ হয়ে গেল।কিছুটা খুশিও হলাম।কিন্তু বেশিক্ষণ টিকল না।রাস্তা পুরো ফাকা।আজকে শনিবার। অবরোধের কারণে আজ পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। নইলে পর পর পরীক্ষা দেয়ার লোক আমি নই।

আমি আগালাম রিকশার আশায়। হাটতে হাটতে  পৌঁছালাম মেইন রোডে।রিকশা না পাওয়ায় পায়ে হাটার বিকল্প নেই।হটাৎ একটি শিশুর দিকে নজর পরলো।ধব ধবে ফর্শা আর কালো পাঞ্জাবি ছেলেটিকে মানিয়েছে।আদর করতে আমি উদ্ধত হলাম।এমন সময় একটি গতিশীল মাইক্রো বন্ধ করে দিল এই নিষ্পাপ  হৃদয়কে। আমি এতে মটেও আশ্চর্য হইনি।যান্ত্রিক খেলাগুলো আমার রক্তের ভয় কাটিয়ে দিয়েছে।

এগলাম সামনে অজান্তেই চোখের কোণে পানি এসে গেল।সামনে হাটতে থাকলাম মনের সুখে।আমার আবার মাটিতে তাকিয়ে হাটার অভ্যাস আছে আগে থেকেই।হুট কিরে চোখে পরলো মাটিতে পরে আছে পাখি।যত সামনে যাই ততবাড়ে পাখির সংখ্যা।সব পাখি আকাশ থেকে পরছে। অনুভব হল আমার হাটতে কষ্ট হচ্ছে।নিম্নমুখী বল অনুভুত হচ্ছে।সময় কেন জানি দৌড়াচ্ছে।এবার বুঝতে পারলাম  পৃথিবীর অভিকর্ষজ তরনের মান বেড়ে গেছে।এক লাফে বোধ হয় ১০ পার হয়ে গেছে।আস্তে আস্তে কষ্ট বাড়তেই থাকলো।আমি বসে পড়লাম মাটিতে ব্যাগ থেকে পানি বের করে পান করতে করতে আমি ভাসতে শুরু করলাম।সব কিছু উলট পালট হয়ে গেল।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ সময় থমকে গেছে।আমি খুশিতে গা নাচিয়ে উঠলাম।বেশ কিছুক্ষণ লাফালাফি করার পর আর শক্তি অবশিষ্ট ছিল না।তাই স্থির হয়ে গেলাম। সামনে আলোর শিখা দেখা গেল।আমি উৎসুক হয়ে উগ্রসর হলাম।কাছে যেতেই দেখি সেটি হল সেই ছোট্ট ছেলেটি।আমি তাকে স্পর্শ করতেই সবকিছু কেমন জানি সাদা হয়ে গেল।মনে হল জেন ওহাইট টর্চার রুমে আছি।আমি কিছু বুঝে উঠতে পারি না।তার পর হুট করে সব কিছু আগের জায়গায় ফিরে যায়।সব কিছু সাভাবিক হয়ে জায়।

আমি উপলব্ধির চেষ্টা করি কি হচ্ছে এসব।লক্ষ্য করলাম আমি সেই আগের জায়গায় শিশুটির কাছে দাড়িয়ে যেখানে মাইক্রো ঠিক আগের মত আসছে।আমি নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছেলেটিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।নিজে দাড়িয়ে মাইক্রোর সামনে। এবার যাত্রায় আমি বেচে গেলাম।পরক্ষণেই রাগের চোটে আমি মাইক্রোর ড্রাইভারকে কলার ধরে গাড়ির বাইরে আনলাম আর তাকে লিসেন্স দেখাতে বললাম।সে না সুচক উত্তর দেয়ায় উপস্থিত জনগণ তাকে গণ ধোলাই দিল।কিন্তু, সেই ছেলেটি ড্রাইভারকে ছেরে দিতে বলায় সে এবারের মত বেচে গেল।

রাস্ত এবার জনগণ রিকশায় পুর্ণ।আমি অনতিবিলম্বে রিকশা নিলাম।ভাড়া ঠিক হল ৪০ টাকা।শুরু হল যাত্রা।আমি ঘড়ির দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করলাম বাজে বেলা ১১:০০টা।পরীক্ষা ঢের আগে শুরু হইয়াছে। এখন আমি চিন্তা করতে থাকলাম সময় তো থমকে গিয়েছিল তাহলে এত দেরি হল কি করে।প্রথম বারে তরন বাড়ায় সময় দ্রুত কেটে গেছে। দিতীয় বারে ঠিক সমপরিমাণ সময় থমকেও গিয়েছিল। তাহলে এত সময় গেল কিভাবে।তখন মাথায় আসল মাঝখানে শিশুটিকে স্পর্শ করার পর কিছুক্ষণের জন্য সব কিছু অস্তিত্বহীন হয়ে পরেছিল।হয়ত তখন কিছু একটা ঘটেছে।কিন্তু তাই বলে ঘণ্টা নাই হয়ে গেল।এই কথা ভাবতে ভাবতে দেখি স্কুলে পৌঁছে গেছি,রিকশাওয়ালা বাড়ার জন্য হাক পারছে।আমি তাকে ১০০টাকার একটি নোট ধরিয়ে দিলাম

,যথারীতি সে ৬০ টাকা ফেরত দিল।রিকশা থেকে নামলাম দেখি বাজে বেলা ১১:২৫।পরীক্ষা শেষ ১২:৩০এ

।এক দৌড়ে  মাঠে পৌঁছালাম।ভাবতে থাকি আম্মুকে দেয়া কথা যে,আজকে ১০০ পেতে হবে।যেটুকু সময় আছে তাতে পাস মার্ক তুলতে পারলে বাচি।এই চিন্তাও বাদ দিলাম।কারণ এখন আমার লক্ষ্য কক্ষ নং ১০১।লাগা দৌড়।রুমে ঢুকে খাতা-প্রশ্ন নিয়ে লেখা করলাম শুরু।লেখা চলল পাক্কা ঘণ্টা। তাও ভাগ্য যে ঘণ্টা সময় পেয়েছি নইলে ফেল হয়ে যেতাম।

লিখতে লিখতে টেরই পাইনি কখন ঘণ্টা কেটে গেল।পরিদর্শক হাজির খাতা নিতে খাতায় হ্যাচকা টান মারতেই আমি চিৎকার করে উঠি নাআআআ........

 

মায় চেচিয়ে উঠলো হামি ঘুম থেকে উঠ আজকে তোর পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা।এতক্ষণে টের পেলাম আমার চিন্তাই অপদার্থ।


Hami Mushfique I am a student of APBN.SSC-25.Thanks