পুণ্যব্রত

_

Jul 4, 2024 - 02:51
Jul 5, 2024 - 01:45
 0  17
পুণ্যব্রত

হৃষ্টপুষ্ট গোলগাল স্থূল শিশুটি জন্মক্ষণে মায়ের প্রসব কষ্ট বাড়িয়ে যেদিন আসে দরিদ্র ঘরে, সেদিন হয়তো চাঁদ অসীম আলো গুটিয়ে লুকিয়ে ছিল গ্রহণের ভয়ে ।কিন্তু শিশু মুখের আলোয় ঘর ভরে ছিল।'মা নিষ্পাপ মুখে চুমু দিয়ে বলেছে দশের সেরা হও'।গ্রামের উদার শ্যামল আর নির্ভেজাল খাবারে সমবয়সীদের ছাড়িয়ে শিশুটি বাড়তে থাকে ঈর্ষণীয়। বলিষ্ঠ তেজদীপ্ত দেহাকৃতি দেখে মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃসাধ্য কাজটি করার জন্য তার জন্ম।

সত্যিই সেই দুঃসাহসী তরুণ মায়ের অনুমান সত্য করে হয়ে উঠে শত জনে একজন। সাধারণ দরিদ্র জীবনের মালিন্য থেকে নিজেকে মুক্ত করে ক্রমে স্বৈরীমনের আমিত্বের স্বেচ্ছাচারিতায় হয়ে উঠে কুখ্যাত ডাকাত সর্দার। গড়ে তোলে বিশাল বহর।ঢাক বাজিয়ে,ঢোল পিটিয়ে, চিঠি পাঠিয়ে, জানান দিয়ে লুট করে মূল্যবান সম্পদ, অলংকার, টাকা-কড়ি,বীরের মতো সম্মুখে হেঁটে। শিল্পোন্নয়নের নতুন ঢেউয়ে দেশ যখন মজুর খাটবার শ্রমিক অন্বেষণে, চৌকিদারের খাঁকি পোশাক রঙের ভয়ে মানুষ যখন ঘরের কোণে,তখন পর্বতশরীরী এই তেজী ডাকাত, দারোগা-পুলিশ, থানা তোয়াক্কা না করে গর্বের সাথে স্বাধীন পেশায় জীবন-যাপন করে। শোনা যায় জবু ডাকাতের কিছু আদর্শিক গুণ আছে।গরীব ঘর আর নিজ এলাকার ক্ষতি না করা।তার দাপটে এলাকায় ডাকাতি তো দূরে থাক,ছিঁচকে চোরও চুরির সাহস পায় না। সেই নিশ্চিন্ত নিরাপত্তায় এলাকার মানুষ নিরাপদ ঘুমে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে নাম…সাহস, শক্তি, স্পর্ধা.. আতঙ্ক...

একদিন জবু ডাকাত নিজ গ্রামে বোনের বাড়িতে সস্ত্রীক দাওয়াত খেতে যায়।কত খাবার বৈচিত্র্য! বিরিয়ানি,মাংস খেতে খেতে বিরাট দেহধারী ভোজন প্রিয় প্রভাবী ডাকাত জীবনের এক গভীর স্বাদ খুঁজে পায়।কত জীবন পেরিয়ে গেল,কত বসন্তের রঙিন আবেশি মুহূর্ত তার পৌরুষ কাঁপিয়েছে, তবু সে পর্বতের মত অটল,অনড়!যে পেশায় ঘৃণা সমগ্রজনের,সে পেশায় সে গর্বিত, দাম্ভিক! দাঁড়ানো অবস্থায় তার পাশে অন্য মানুষদেরকে অনেক ছোট মনে হয়।তার স্ত্রীও মেঘস্পর্শী! দামিনী!

অদৃশ্য নিয়তিকে হাতে বন্দি করে ভাগ্য চাকা ঘুরিয়েছে নিজের নিয়মে অথচ সেদিন ডাকাত সর্দার ঘূর্ণাক্ষরেও টের পায়নি যে,তার নিয়তি ঘরের কোঠায় অপেক্ষায়। ভরা পেটে তৃপ্তির সুখে যখন সে সুখনিদ্রায়, রাত্রির মধ্যপ্রহরে চকচকে কসাইছুরি নিয়ে মাটির ঘরের কোঠা থেকে নেমে আসে অদৃষ্টের নিয়তি। বিভীষণের চক্রান্তে যজ্ঞাগারে নিরস্ত্র মেঘনাদ যখন অস্ত্রধারী লক্ষ্মণকে দেখে হতবিহ্বল হয়, তেমনি নির্বাক ডাকাত সর্দার কিছু বুঝবার আগেই ছুরির ধারালো লম্বা রেখায় নিজের এবং স্ত্রীর চর্বিযুক্ত ভুরি ঢেলে পড়ে নিচে। 'দুঃসাহসিনী,ক্ষমতাধারিনী ডাকাত স্ত্রী চিৎকার করে বলে 'আমার ভুরি পেটে ঢুকিয়ে দাও,আমি থানায় যাব' । ক্রমশ সে চিৎকার ঘর ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে….আর মেঝেতে জমতে থাকে টুকরো মাংসের পাহাড়!

তখন এলাকাবাসী পাপ বিনাশের এই শুভযোগে নীরব থেকে কুড়ায় অশেষ পূণ্য ! সম্মিলিত পুণ্যব্রত শেষ হয় ভোরের আযানের ধ্বনিতে....