নদীর হৃদকথন

Jun 20, 2024 - 20:30
Jun 28, 2024 - 17:10
 1  21
নদীর হৃদকথন

      

নদীঘেরা এদেশে একসময় অন্যরকম রুপ ছড়িয়ে ছিল। বাংলা প্রকৃতির চারপাশ জুড়েই জলছাওয়া। কোনটা বিধ্বংসী প্রমত্ত পুরুষ, কোনটা উন্মাদ ক্ষ্যাপা, কোনটা মায়াময়ী স্নেহশীলা, আবার কোনটা সর্বগ্রাসী ভয়ঙ্করী ! যখন নদীর যৌবনকাল তখন কত প্রমোদ,কত উল্লাসে নাচে,সাজে নদীনারী,আর পুরুষ নদও অতল জলের কালো রুপে ফুঁসে উঠে দ্রোহে, বিক্ষোভে ও কামনায়।

আবার রাতে নদীগুলো বুকে শত আর্তনাদ নিয়ে হুহু করে করে কাঁদে।কত কিছুর নীরব সাক্ষী নদীগুলো।কত কিছু সইতে হয়,কত কিছু ভাসিয়ে নিতে হয় নিত্য।সহ‌্য,অসহ্য সব..

ভেসে নেয় নারীর কান্না, পুরুষ বীর্য,বিনষ্ট ভ্রুণ, রাত্রির নষ্টামি, খুনী হাতের পাপ, আত্মবধী অবলার শরীর,ছিন্ন মাথা, কিশোরীর ওড়না,গলিত লাশ, ভাঙা নৌকা, বিচ্ছিন্ন কচুরিপানা,আর শূন্য হৃদয়ের হাহাকার।সেই গোধূলি নির্জনতায় হুহু জলে দাঁড়িয়ে বাতাস আর সময়ের সাংঘর্ষিক মুহূর্ত এঁকে নেয় অপটু চিত্রকর। তবু নরম জলের,অবাধ জলের আফসোস বৃহত্তর মনে।

সময়গর্ভে নদীগুলো অনেকটা বিলীন হয়েছে।জনবিস্ফোরণে নদীও খুন হয়েছে দস্যু হাতে।শাসিত হয়েছে নিয়ম অনিয়মে। মানুষের লোভী গ্রাসে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। তবু জলচিহ্নের সাক্ষী কিছু শাখা নদী, পূর্ণা নদী বর্ষায় হয় আবেদনময়ী খরস্রোতা!

জলের ঘূর্ণিস্রোতে আরো ভেসে যায় ব‌ৃন্ত আলগা পাপড়ি গোলাপবুক খালি করে ।যে পাপড়িটা হতে পারতো বাসরের হৃদয় বদলের মৌন সুখ। জলের স্বৈরীস্রোতে হাঁসের দলে পুরুষ হাঁসটিও অনিচ্ছা সাঁতারে ভাসে দিকভুলে। ফর্সা সঙ্গিনী দিগন্তে চেয়ে বিলাপ করে।হৃদয়ক্ষরণের ফোঁটা ফোঁটা জল জমে নদীদেহে।উড়ন্ত গাঙচিলের সফেন পালক জলে ভেসে যায়, যেটি হয়তো শিল্পীর রঙতুলি হতে চেয়েছে, কিন্তু ফেরা হয়নি।যে তরুণটি বড় ডাক্তার হবার স্বপ্নে মর্গেও কাটা শরীরের রহস্যে তন্ময় দীর্ঘ সময়,সে খোলা জলে ডুব সাঁতারে নিখোঁজ, উদ্দাম কিশোরটি বিজ্ঞানী হবে বলেই আইনস্টানীয় চশমার পাওয়ারে জল আর লোহার ঘনত্ব মাপতেই মগ্ন,সে নিজেই টুপ করে ডুবে গেল অগভীর জলে।যে শিশুরা জলকুমারীর রঙিন রুপকথার দেশ ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়ে জলে অবুঝ সুখে তাদেরও অনেকের ফেরা হয়না ঘরে...

আট বছরের ছোট অনিতা গিয়েছিল পরিবারের সাথে ইছামতীর শান্ত জলে শুদ্ধ স্নানে। কিন্তু দুর্বিপাকের হঠাৎ স্রোতে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় বিস্ময়জলে !সাঁতার না জানা আর্তনাদরত মা সহ অন্যরা তাকিয়ে রয় অতলে, মুহূর্তে হারিয়ে যাওয়া বাড়ানো হাতের দিকে চেয়ে..

কিছুক্ষণ পরে সদ্য প্রাণ বেরিয়ে যাওয়া কোমল দেহ খুঁজে পেলে জানা যায় জলের ভিতর খারাপ জিন ঘাড় ভেঙে দিয়েছে। সংস্কারাচ্ছন্ন সাঁতার না জানা বড় দলে মানসিক শক্তি আসে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মেনে নেবার এই ভেবে যে, অদৃষ্টের উপর কারো হাত নেই...