জলকাব্য

Jan 29, 2025 - 18:47
Jan 30, 2025 - 16:32
 0  10
জলকাব্য

ধামুরহাট থানার সর্দার পাড়ার নিকটে মুচিপাড়া।একজন বৃদ্ধ দাদু জুতো সেলাই করে।রঙ চটা জুতো পলিশ করে নতুন করে।হাটবারে ছোট বাক্স নিয়ে হাটে বসে।অন্যদিন বাড়ির পাশে সরুপথে বসে চেয়ে থাকে দূর পথের বাঁকে।চেনা-অচেনা মানুষের আসবার অপেক্ষায়।

তার পাশে গজে উঠা নতুন মুসলমান পাড়া। পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা অথবা বসতবাড়ির সংকুলানে বিলের মাঝে গড়ে উঠা নতুন কয়েকটি বাড়ি, লোকালয়ের নির্জনে,একঘরা মানুষের মত দুঃখী।বানের তোড়ে চারপাশ জল থৈ থৈ করে, ছেলেরা বড় ধানসিদ্ধ করা পাতিলে বসে ভেসে ভেসে ঘাস কেটে আনে প্রিয় গরু-ছাগলের জন্য।কলার ভেলায়ও চড়ে। জলবন্দি এ কয়টি বাড়ির ডানপিটে ছেলে ছানা তার সহপাঠিদের সাথে মাছের নেশায় সারাক্ষণ বিলজলে ভিজে। সন্ধ্যার আঁধারেও টর্চের আলোয় মাছ শিকার করে। জলের উপর আলো পড়লে বোকা মাছগুলো লাফিয়ে উঠে অচেনা ধাঁধায়।দেয় আত্মাহুতি না জেনে।প্রেমে ব্যর্থ হয়েও নদীর জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে, অথবা গলায় ফাঁস দিয়ে দুঃখ মোচনে মানুষ আত্মহত্যা করে। মাছেরাও হয়তো বিচ্ছেদ সুরে কাঁদে,দুঃখ পোষে। কিন্তু জলের মাঝে কান্নাজলের নিগূঢ় তত্ত্ব বিমূর্ত থেকে যায় বলেই ঐ এক কথা 'মাছের মার কান্না'প্রবাদে মাছ নারীরা চিরকাল উপহাস্য।

মাছ ধরে নদীর পাড়ের ছেলে,বানের দেশের ছেলে। জল আর মাছের মিতালী তুলে আনে ঝুড়ি ভরে।রুপারঙা চকচকে মাছপুরুষ ক্ষণ জীবনের আফসোস নিয়ে আজীবন বাঁচার আশায়, কিন্তু তাদের নিয়তি বিশাল জলের সুখাবাসের বাইরে ধারালো বঁটিতে। স্থির নীল চোখে নিঃসীম বেদনা নিয়ে বলি হয় নিয়ত।তারপর খাবার টেবিলে মনলোভা আহার.. সেই লোভ আর নেশায় ছানা হাঁটু পানি,কোমড় পানিতে কারেন্ট জাল ফেলে। আহার তৃপ্তির চেয়ে ধরার সুখনেশায় পেয়ে বসে তাকে।এ যেন বহুযুগের পূর্বপুরুষের রক্ত জাগে শরীরে। নদীর সাথে, জলের সাথে কী গভীর বন্ধন মানুষের! ছানার চোখে ভেসে উঠে সাঁতারু দাদা-নানার সুঠাম বলিষ্ঠতা।ভরা নদী সাঁতরে পার হবার কী দুঃসাধ্য স্পর্ধা! গ্রামীণ এই মাছ সাঁতারুরা সুযোগ পেলে হয়তো ইংলিশ চ্যানেলও অতিক্রম করতে পারতো।সে সুখও ছানার বিশ্বাসে।মাছ ধরে পড়ন্ত বিকেলে বাড়িতে ফিরে। শরীরটা কেমন ঝিমঝিম করে।গোসল অজু সেরে আরবি বই নিয়ে কিছুক্ষণ পড়ে।ক্রমশ শরীর খারাপ হতে থাকে।মা দেখে চিৎকার করে বলে জলে কিছু কামড় দেয়নি তো। ছানার মনে পড়ে পায়ে পোকার মত কুটুস কামড় অনুভব হয়েছিল বুকজলে দাঁড়ানো অবস্থায়।মার বুঝতে বাকি থাকেনা। 

কবিরাজের কাছে যাবার পথে আধশোয়া অবস্থায় অবাধ বেদনা নিয়ে জলের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে ছানা..আর মুখ দিয়ে ক্রমাগত পড়তে থাকে লালচে তরল..