আমি ও আমিত্ব

Sep 12, 2024 - 20:05
Sep 12, 2024 - 20:10
 0  19
আমি ও আমিত্ব

জগত সংসারে “আমি” ও “আমার” শব্দ দু’টির ব্যবহার যতো বেশি হয়, হয়তো আর কোন শব্দ এত ব্যবহার হয় না। আপনার জন্ম দেওয়া সন্তানকে জিজ্ঞাসা করুন, এ বাড়িটি কার? সে উত্তর দেবে আমার। এই গাড়িটি কার? সে উত্তরে বলবে আমার। 

সৃষ্টিকর্তা তাঁর “আমি” ও “আমিত্বের” প্রকাশ ঘটাবার জন্য মানুষ-সহ কুল মাখলুকাতকে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হওয়ার কারণে তার মধ্যেও এই “আমি” ও “আমিত্বের” প্রকাশ ঘটাবার অদম্য ইচ্ছা বা কামনা বিদ্যমান দেখা যায়। অথচ “আমি” ও “আমিত্বের” ব্যবহার সাধারণের জন্য অবৈধ। আর একারণেই মনি, ঋষি, গাউছ, কুতুব রিয়াজত এর মাধ্যমে নিজ ভক্ত বা শির্ষকে “আমি” ও “আমিত্বের” থেকে শূন্য করে ফেলেন। তাঁরা দয়া করে নিজ ভক্ত বা শির্ষকে উপদেশ দেন যে, আনাকে (আমিত্বকে) ফানা কর। এমনকি নিজ আমিত্বকে খোদার আমিত্বে বিলীন করে দেও। তখন একজন ভক্ত বা শিষ্য কে নিজের আমিত্বকে, নিজের অস্তিত্বকেও সৃষ্টিকর্তার সামনে লীন করে দেন। আর একে আধ্যাত্মিক পরিভাষায় (মারেফতের ভাষায়) ফানাফিল্লাহ বলা হয়। মানুষ যেহেতু অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব লাভ করেছে,  আবারও  দেহ ত্যাগের  মাধ্যমে অনস্তিত্বে চলে যাবে।

অপরদিকে, সৃষ্টিকর্তা যেহেতু অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব লাভ করেননি; বরং তিনি সব সময় অস্তিত্বে আছেন এবং থাকবেনও, তাই একমাত্র তিনিই অস্তিত্বের আসল রূপ বা হাকীকত। যাঁরা সাধনা, রিয়াজত, ধ্যান-সাধনা’র মাধ্যমে নিজের আমিত্ব এবং অস্তিত্বকে ঐ চিরস্থায়ী মওলা’র নূরানী চরণের সামনে বিলীন করে দিয়ে ফানাফিল্লাহর মাকাম অর্জন করতে সক্ষম হন তাঁরা তাঁদের এই ফানা হওয়ার সাধনার মধ্য দিয়ে বাকাবিল্লাহর মাকামও পেয়ে যান।

Þ আরবিতে একটি কথা প্রচলিত আছে, “মান আরাফা নাফ্সাহু, ফাকাদ আরাফা রাববাহু” --- অর্থাৎ, যে নিজের অস্তিত্ব বা নিজকে চিনেছে, সে অবশ্যই তার রবকে চিনতে সক্ষম হয়েছে।

Þ হিন্দু ধর্মে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার নিজের সম্পর্কে গীতায় বলেছেন, “আমিই সমস্ত জগত সংসারের উৎপত্তি ও প্রলয়ের মূল কারণ।”

Þ হিন্দু ধর্মে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার নিজের সম্পর্কে গীতায় বলেছেন, “আমাকে প্রাপ্ত হলেই আর পূর্নজন্ম হয় না।”

বিজ্ঞজনেরা বলেন, সবখানে যেন আমরা ‘আমি’ ‘আমি’ ও ‘আমার’ ‘আমার’ না করি। কেননা, ব্যক্তি আমি নিজেও তো আমার নই, আমিও তো সেই পরমেশ্বরের। আমি নিজেই যখন আমার নই, তাহলে জগত সংসারের অন্য কিছু আমার কি করে হবে? 

মহান স্রষ্ট্রা আমাদের জগৎ সংসারে কল্যাণ ও দয়া দানের পাশে চরম এই সত্যকে বুঝত পারার তৌফিক দিয়ে আলোকিত হতে সাহায্য করুন।