অলক্ষ্যের ঈশ্বর

_

Jul 18, 2024 - 18:45
Jul 18, 2024 - 17:39
 0  19
অলক্ষ্যের ঈশ্বর
ইন্টারনেট

খড়ের ছাউনির মাটির বাড়ি। উঠোনভরা পেয়ারা, পুঁই আর লাউয়ের সজীবতা। সীমানার ওপার থেকে ছ্যাতাপড়া আমগাছের বখাটে ডালের উঁকিঝুঁকি।শির উঁচানো ডাবগাছের গম্ভীর মৌনতা আর বেঢপবাড়া পেঁপের ছায়ায় টুনটুনি আর ঘুঘুরা ভালোবাসার নীড়ে সুখের ওমে চোখ মুদে।তখন উদার আকাশের জোছনাবানে ভাসছে আছিয়া বানুর কাদাজলের আলপনায় বিলাসী বারান্দা, খেজুর পাতার দোপাটিতে নকশী কাঁথার শয্যা ও চতুর্দশী নাতনির লাবণ্যমুখ।গাঢ় হওয়া রাতের সাথে বাতাসের শীতল ছুঁয়ে যাওয়া মদিরতায় ঘুমকাতুরে বিশাখা জড়ানো কন্ঠে বলে 'ও দাদি গল্প শুনাবা না?'শুনামু বুবু ,একটু সবুর কর, বলে আছিয়া বানু' নামাজে বসে। সঞ্চিত কল্পকথা ও দিন-রাত্রির উত্থান-পতন থেকে দাদী  রোজ গল্পজালে বাঁধে বিশাখাকে। অনেকটা নেশার মতো।আরব্য রজনীর চেয়ে ও বেশি।

আছিয়া বানু নফল নামাজ শেষে, কল চেপে এক মগ ঠাণ্ডা পানি খায়।পান মুখে দিয়ে শিমুল তুলোর কোমলে মাথা রাখে। সুগন্ধি জর্দার সুবাস ছড়িয়ে ডাকে বুবু!বুবু! বিশাখা তখন ঘুমের দেশে স্বপ্ন কুড়াতে বিভোর! জোছনা আরও গভীর!আছিয়া বানু বিশাখার নিষ্পাপ ঘুমন্ত মায়ায় জড়িয়ে যায় আরও বেশি করে।যে মায়ায় বাঁধা তার ছোট্ট পৃথিবী। অজান্তে হারিয়ে যায় দূর অতীতে।যে রূপকথা বিশাখার কাছে গল্প,তা আছিয়া বানুর গোপন সত্যি।

তার বয়স তখন সাত কিংবা আট বছর। দেশে তখন ধর- পাকড়, হত্যা, হানাহানি।শুনেছে যুদ্ধ চলছে।যুদ্ধ কী না জানলেও বুঝেছে যুদ্ধ মানে পালানো, মৃত্যু, বুলেট,লাশের স্তূপ আর বিভৎসতা! একদিন ভাত দুপুরে আতঙ্কে ছুটছে পাড়াসুদ্ধ মানুষ, ছুটছে দিগ্বিদিক। মগডাল,চৌকির তলা, ঘরের কোঠা,শস্যক্ষেত, সবখানে আত্মগোপনের অপচেষ্টা।ছোট্ট আছিয়া এই অস্থিরতায় দিশা হারিয়ে পড়ে দীঘলদেহীর হাতে।ছুরি হাতে স্বয়ং যম!উদ্যত ছুরির ‌আতঙ্কে কম্পিত শিশুর হঠাৎ মরণচিৎকারে কেঁপে উঠে জীবনবিধ্বংসী হাত, পড়ে যায় এবংশানরঙা চকচকে ছুরি। হয়তো তখনই অলক্ষ্যের ঈশ্বর অদৃশ্য শিকলে বেঁধেছিলেন দ্রুতপদীর পা।তাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় ভিনদেশী!জননিধন অভিযানে হাতছাড়া ছোট প্রজাপতির পেছনে ছুটে অযথা সময় নষ্ট করেনি।তারপর পরিবর্তনের পালাবদলে স্বাধীন দেশে রঙিন পাখা মেলে কেটেছে আছিয়া বানুর শৈশব-কৈশোর আর বহু বহু দিন-রাত্রি...... কিন্তু বুকের গভীরে জন্মদাগের মত রয়ে যায় দীঘলদেহীর ঝলকানো ছুরি....

জোছনার জল আর চোখের জলে ভিজে আছিয়া বানুর সারারাত্রি এবং নিকট দূরে কর্কশ কাকিনীরা দলবেঁধে গান গায় ঘুম ভাঙানির…