অমর একুশে ও গৌরবদীপ্ত নারীরা

Jul 18, 2024 - 18:40
Jul 18, 2024 - 17:38
 3  9
অমর একুশে ও গৌরবদীপ্ত নারীরা
অমর একুশে ও গৌরবদীপ্ত নারীরা

১৯৫২ সালের মাতৃভাষার আন্দোলনে পুরুষদের শ্লোগানে সমস্বর দিয়েছিল নারীরাও, বর্ণমালার অস্তিত্বের দাবিতে পুরুষের পাশাপাশি ভাষা আন্দোলনে সহযোদ্ধা হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছিলেন নারী আন্দোলনকারী সৈনিকেরা। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আমতলায় ভাষার দাবিতে যে মহাসমাবেশ হয়েছিল তা কার্যকর করায় ভূমিকা রেখেছিলেন ইডেন কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও বিভিন্ন মহিলা কলেজের কিশোরীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের মেয়েরা রাত্রিতে লুকিয়ে লুকিয়ে ভাষা আন্দলনের পোস্টার বানাতেন, আহতদের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা রাখেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রীরা। আহতদের চিকিৎসা সাহায্যের জন্য সকল ক্ষেত্রের শিক্ষার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে  চাঁদা তুলে আনতেন। পুলিশের তাড়া খাওয়া ছাত্রদের নিজেদের কাছে লুকিয়ে রাখতেন। আন্দোলনের খরচ চালানোর জন্য অনেক গৃহিণী অলঙ্কার খুলে দেন, ঢেলে দেন নিজের শেষ কানাকড়ি। শুধু তাই নয়, ভাষা আন্দোলনে জড়িত হওয়ায় অনেক নারীকে জেলও খাটতে হয়েছে। কেউ হারিয়েছেন সংসার। কেউ আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হয়েছেন বহিষ্কৃত। কেউ দিয়েছেন প্রাণ।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে সর্বপ্রথম নারীরাই পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে পুলিশের ব্যারিকেড উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেন। উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করায় সর্ব প্রথম প্রতিবাদী হন ঢাকা উইমেন ইউনিয়নের ভিপি ডঃ সাফিয়া খাতুন ও ড: সুফিয়া আহমেদ। সিলেটের নারী ও ছাত্রী সমাজকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন জবেদা খাতুন। বিভিন্ন পথ সভা করে, বিভিন্ন বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে ও জনমত গঠন করে আন্দোলনে লোক একত্র করেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়য়ের তুখোড় ছাত্রী  রওশন আরা।  কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলেন কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যাপিকা লায়লা নুর, নারী হয়ে ভাষা আন্দোলনকারী হিসেবে কারাভোগ করে তিনি পুলিশি নির্যাতনের স্বীকার হন। নারায়ণগঞ্জের লোক সমাগমে নেতৃত্ব দেন তেজদীপ্ত নারী মমতাজ বেগম।

বিস্মৃত হয়েছেন আন্দোলনে অংশ গ্রহণকারী চট্রগ্রামের ভূমিকন্যা চেমন আরা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন সফল করার ক্ষেত্রে বেগজাদী মাহমুদা নাসির, মমতাজ বেগম, মালেকা, সুলতানা রাজিয়া আফরোজা, খালেদা খানম প্রমুখের অবদান অনস্বীকার্য।

একুশে ফেব্রুয়ারি জাতি রাষ্ট্রের মর্যাদা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত হলেও এ সংগ্রামের বীরঙ্গণাদের প্রকৃত মর্যাদা দেয়া হয়নি। ব্যক্তি উদ্যোগে লিখিত পুস্তক ব্যতীত কোন পাঠ্য পুস্তকেও তাদের উদ্ধৃতি নেই। অথচ সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে এসব মহিয়সী নারী মাতৃভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির আন্দোলনে পুরুষদের সাথে কাঁধেকাধ মিলিয়ে সংগ্রাম করেছে। পুরুষদের মতোই গ্রেফতার হয়ে জেল জুলুম সহ্য করেছে। সামাজিক কলঙ্কের দায় নিয়ে কেউ কেউ স্বামী সংসার থেকেও বিতাড়িত হয়েছেন। তাই ভাষাসৈনিক এসব নারীদের যোগ্য স্বীকৃতিদান এখন সময়ের দাবী।